ওয়াইফাই রাউটার কিনতে চান? ৭টি বিষয় যাচাইয়ের আগে কিনলে ঠকবেন

বাসা বা অফিসের জন্য রাউটার দরকার? হুট করেই রাউটার কিনে ফেলতে যাবেন না। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয় যাচাই করুন রাউটার কেনার আগে। আজকের আর্টিকেলে রাউটার কেনার আগে ৭টি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। তাই ধৈর্য্য নিয়ে পড়লে আশা করি ঠকবেন না। চলুন শুরু করা যাক।

ভালো ওয়াইফাই রাউটার চেনার উপায়

১. কোন ধরনের রাউটার আপনার প্রয়োজন?

রাউটার সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকলে জানার কথা, সাধারণত বাজারে গেলে আপনারা তিন ধরনের রাউটার দেখতে পাবেন। যেমন -

  1. Single Band Router। যার ফ্রিকোয়েন্সি 2.4GHz এবং ডাটা রেট 11MBPS।
  2. Dual Band Router। যার ফ্রিকোয়েন্সি 5GHz এবং ডাটা রেট 600 MBPS।
  3. TRY Band Router। একদমই লেটেস্ট এবং Wifi 6 সাপোর্টৈড রাউটার এটি যেখানে ফ্রিকোয়েন্সি দুইটাই থাকছে অর্থাৎ 2.4GHz + 5GHz। Try Band Router এর ডাটারেট 10GBPS।

তিনটা ব্যান্ডের ওয়াইফাই রাউটার দেখে বুঝতেই পারছেন সিঙ্গেল ব্যান্ড এবং ডুয়েল ব্যান্ডের চেয়ে ট্রাই ব্যান্ড রাউটার ব্যাপকভাবেই আপগ্রেডেড এবং অনেক বেশি পাওয়ারফুল ও ফাস্ট।

এখন প্রশ্ন হলো আপনি এই তিন ক্যাটাগরির রাউটারের মধ্যে কোনটা কিনবেন। আমার পরামর্শ থাকবে সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার একদমই বাদ দিবেন। চেষ্টা করবেন ডুয়েল ব্যান্ডের রাউটার কিনতে।

দেখা গেল আপনি অনেক টাকা খরচ করে ল্যাপটপ কিনেছেন, এন্ড্রয়েড ফোন কিনেছেন, ডেস্কটপ কিনেছেন। কিন্তু এক বা দুই হাজার টাকা বাচানোর জন্য রাউটার কিনতে গিয়ে কৃপণতা করেছেন।

ধরলাম আপনি সিঙ্গেল ব্যান্ডের একটা রাউটার কিনেছেন। এখানে আপনি 500 বা 1000 টাকা বাঁচিয়েছেন। কিন্তু এর ফলে একচুয়াল ওয়াইফাই পারফরম্যান্স পাবেন না।

তাই আপনি অবশ্যই চেষ্টা করবেন একটা ডুয়েল ব্যান্ডের রাউটার নেওয়ার জন্য। আর আপনার বাজেট নিয়ে যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে WIFI 6 সাপোর্টেড ট্রাই ব্যান্ড রাউটার নিতে পারেন। একদমই রকেটের মতো ধামাকা পারফরম্যান্স পাবেন।

তাহলে দ্বিতীয় বিষয়ে (রাউটার এন্টেনা) চলে আসি।

২. কয় এন্টেনা দেখে রাউটার কিনবেন?

রাউটার কেনার ক্ষেত্রে ম্যাক্সিমাম এই একটা ভুল সবাই করে যে, বেশি এন্টেনা দেখে রাউটার কেনে যাতে বেশি এরিয়া কাভারেজ পায়। অর্থাৎ এক রুমে রাউটার রেখে আপনি দুই বা তিন রুম পর ওয়াইফাই ব্যবহার করতে চান।

কিন্তু আসল ব্যাপার হলো রাউটারের কাভারেজ এরিয়া বেশি হওয়া এন্টেনা বেশি থাকার উপর নির্ভর করে না। তবে হ্যা, এন্টেনা বেশি থাকার সুবিধা আছে। যেমন-

  • Bandwidth টা ভালো পাবেন।
  • একই সাথে একাধিক ডিভাইস কানেক্ট থাকলেও বেটার পারফরম্যান্স দিবে।
  • এন্টেনা বেশি থাকলে কিন্তু চতুর্দিকে নেটওয়ার্কও অনেক স্ট্রং থাকে।

এখন প্রশ্ন হলো, যদি আমি কাভারেজ এরিয়া বেশি চায় তাহলে আমাকে কি করতে হবে। কাভারেজ এরিয়া বেশি চাইলে আপনার Antenna Gain থাকা লাগবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে আপনার রাউটার এন্টেনার DBI কত।

নরমালি আমরা যে রাউটারগুলো ব্যবহার করি সেগুলোর DBI থাকে 5। সেক্ষেত্রে আপনাকে DBI বেশিওয়ালা রাউটারগুলো কিনতে হবে। যেমন DBI 7, DBI 10, DBI 11, DBI 15 ওয়ালা রাউটারগুলো নিতে হবে।

আপনার রাউটারের DBI যত বেশি হবে আপনি কাভারেজ এরিয়াটা তত বেশি পাবেন। আর নরমাল একটা রাউটারের যত এন্টেনাই থাকুক DBI 5 ই থাকবে।এটা মাথায় রাখবেন আপনার যদি কাভারেজ এরিয়া বেশি দরকার হয় বেশি DBI ওয়ালা রাউটার কিনতে হবে।

এবার চলে আসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রাউটার সিকিউরিটিতে।

৩. রাউটারের সিকিউরিটি ঠিক আছে তো!

রাউটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অজান্তেই বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেমন ডিভাইস হ্যাক, নজরদারি বা ভাইরাসেরও আক্রমণ ঘটতে পারে রাউটারের মাধ্যমে।

সেজন্য রাউটার কেনার সময় দেখবেন WPA3 সিকিউরিটি সিস্টেম আছে কিনা। যদিও এখন ম্যাক্সিমাম রাউটারে এই সিকিউরিটি সিস্টেম থাকে, আবার অনেকগুলোতে থাকে না।

কেনার সময় রাউটারের স্পেসিফিকেশনে গিয়ে দেখে নিবেন WPA3 আছে কিনা। এট অনেক বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত স্পেসিফিকেশন রাউটারের প্যাকেটের গায়েই লেখা থাকে।

এবার অনেকেরই একটা কমন প্রশ্ন আসতে পারে যে কোন ব্র্যান্ডের রাউটার কিনলে ভালো হবে, বিশেষ করে যারা ব্র্যান্ড ইস্যুতে ভোগেন।

৪. কোন ব্র্যান্ডের রাউটার সবচেয়ে ভালো?

এক কথায় যদি সমস্ত কিছু বিচার বিশ্লেষন করে বলি, আপনি কম দামে ভালো রাউটার নিতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে TP LINK এর রাউটার নিতে হবে। TP LINK কম দামে বেটার সার্ভিস দিয়ে থাকে।

TP LINK ব্র্যান্ডের সব রাউটারই কম দামে ভালো সাপোর্ট দিতে পারবে। তাছাড়া কম দামের মধ্যে ভালো রাউটার রয়েছে D LINK এবং TENDA ব্র্যান্ডের।

এবার আসি আপনার যদি একদমই হাই কোয়ালিটির প্রয়োজন হয় এবং একই সাথে খুবই উন্নতমানের ফিচার সম্বলিত একটি রাউটার দরকার, যেখানে গেমিং, হেভি ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি কাজ একসাথে করা যাবে, তাহলে আপনাকে বিখ্যাত ASUS ব্র্যান্ডের রাউটার বেছে নিতে হবে।

হাই পারফর্মিং রাউটার যদি আপনি নিতে চান এবং বাজেট নিয়ে যদি আপনার সমস্যা না থাকে তাহলে ASUS-ই আপনার জন্য বেস্ট ব্র্যান্ড। এছাড়াও NETGEAR রয়েছে। তাদের রাউটারও যথেষ্ট ভালো।

৫. রাউটারে MU-MIMO টেকনোলজি আছে কিনা?

সাধারণত ওয়াইফাই-এ যত বেশি ডিভাইস কানেক্ট হয় ওয়াইফাই স্পিড তত কমতে থাকে। এক্ষেত্রে নতুন একটা টেকনোলজি আছে যাকে বলা হচ্ছে MU - MIMO।

এই টেকনোলজিটা রাউটারে থাকলে যদি একই সময়ে একাধিক ডিভাইস কানেক্ট হলেও স্পিডে তেমন তারতম্য হয় না। এটাই হলো সুবিধা। আপনি যদি মনে করেন আপনার এই রাউটার থেকে একাধিক ডিভাইস কানেক্ট হবে, তাহলে কেনার সময় রাউটারের বক্সের গায়ে দেখবেন MU - MIMO টেকনোলজিটা আছে কিনা। এটা থাকলে তাহলে নিবেন।

আর আপনি যদি একান্তই বাসায় সিঙ্গেল ইউজ করেন বা আপনার বাসায় আছে দুই বা তিনজন মেম্বার। তাহলে এটা না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। যদি এমন হয় অনেকগুলো ডিভাইস কানেক্ট করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে এই টেকনোলজি সাপোর্টেড রাউটার কিনবেন।

৬. Mesh Technology-র কি দরকার আছে?

আপনার বাসায় বা অফিসে যদি একসাথে অনেকগুলো রাউটার কানেক্ট করার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে আপনার দরকার হবে Mesh Technology সাপোর্টেড রাউটার। এতে আপনি খুব সহজেই কাভারেজ দিতে পারবেন।

তবে যদি মনে করেন অফিসে বা বাসায় একটা রাউটারই ব্যবহার করবেন, তাহলে Mesh Technology রাউটারে না থাকলেও অসুবিধা নেই।

কিন্তু যদি একাধিক রাউটার কানেক্ট করতে চান বা অনেকগুলো রাউটার দিয়ে বিগ এরিয়া কাভার দিতে চাইলে Mesh Technology দেখে কিনতে হবে।

৭. LAN Port দেখে কিনবেন 

বাসায় ধরুন অনলি একটা ওয়াইফাই কানেকশন নিয়েছেন কিন্তু মাল্টিপল ডিভাইস রয়েছে আপনার বাসায়। ধরুন একটা স্মার্ট টিভি রয়েছে, দুইটা কম্পিউটার রয়েছে, তারপর দেখা গেল আরো একটা সার্ভার রয়েছে।

তো এই ডিভাইসগুলো যদি আপনি চালাতে চান তাহলে সবগুলোতেই হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেকশনের দরকার হবে। এখন সেগুলো যদি একটিমাত্র ওয়াইফাই দিয়ে কানেক্ট করেন, তাহলে কিন্তু স্পিড ভালো পাবেন না।

এক্ষেত্রে আপনাকে ল্যান্ড কানেকশন দিতে হবে। ল্যান্ড কানেকশন দেওয়ার জন্য ওয়াইফাই রাউটারের পেছনে দেখবেন অনেকগুলো পোর্ট থাকে। সেই পোর্টগুলো থেকেই ক্যাবলের মাধ্যমে আপনাকে কানেকশন দিতে হবে।

তাহলে রাউটার কেনার সময় ডিভাইস অনুপাতেই আপনাকে পোর্ট দেখে রাউটার কিনতে হচ্ছে যদি বাসায় মাল্টিপল ডিভাইস থাকে। যদি আপনার পাঁচ থেকে ছয়টা ডিভাইস কানেক্ট করতে হয় তাহলে দেখবেন রাউটারের পেছনেও তত সংখ্যক পোর্ট আছে কিনা।

আরো পড়ুন,

অতএব, এই বিষয়গুলো দেখেই আপনাকে রাউটার সিলেক্ট করতে হবে।

শেষকথা

ধন্যবাদ সময় নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। তবে আরেকটি বিষয়ে একটু কথা বলতে হয়। অনেক রাউটারের পেছনে দেখবেন USB পোর্ট থাকে। অনেকে মনে করতে পারেন এটার আসলে কাজটা কি। এটার আসলেই কাজ আছে। যেমন যারা FTP সার্ভার বানাতে চান তাদের জন্য কিন্তু বেশ ইম্পোর্টেন্ট।

সো, আপনার যদি এরকম প্ল্যান থাকে তাহলে USB পোর্ট দেখেই রাউটার নিতে হবে।

এপর্যন্তই। রাউটার নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করতে পারেন।

সোর্স: AFR Technology 

Post a Comment

0 Comments