নতুন রূপে আইফোন 16; চমক নাকি নতুন মোড়কে পুরাতন কিছু!

প্রত্যেক বছরেরই সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিখ্যাত টেক জায়ান্ট অ্যাপলের চমক শুরু হয়ে যায় তাদের আইফোন সিরিজের নিউ ভার্সন লঞ্চিংয়ের মাধ্যমে। ধারণা করা হচ্ছে এবারও অ্যাপল সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে তাদের আইফোন সিরিজের লেটেস্ট ভার্সন আইফোন 16 লঞ্চিংয়ের মাধ্যমে। 

আইফোন 16 বাংলাদেশে শীঘ্রই আসছে

প্রতি বছর আমরা অপেক্ষা করি অ্যাপল কখন তাদের নিউ জেনারেশন স্মার্টফোন লঞ্চ করবে। গত বছর আমরা পেয়েছিলাম 15 সিরিজ। সো, ফাইনালি এবার আসতে চলেছে আইফোন 16 সিরিজ। তাহলে এবার চলুন জেনে নেয়া যাক আপনারা যারা অ্যাপল লাভার আছেন তাদের জন্য আইফোন 16 সিরিজে অ্যাপল কি চমক রেখেছে। 

আসলেই কি চমক নাকি হালকা পাতলা পরিবর্তন করে অ্যাপল আইফোন 16 নামে চালিয়ে দিচ্ছে।

ওয়েল, আইফোন 16 সিরিজের জন্য যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন এই আর্টিকেলটা তাদের জন্যই। জানতে এবং আসলেই কতটা নতুন আইফোন 16 বুঝতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।

আইফোন 16 এর ডিজাইনে কি পরিবর্তন আসছে?

প্রথমত যেসব বিষয়ে শোনা যাচ্ছিল এবারের আইফোন 16 হতে পারে পোর্টলেস ডিভাইস। অর্থাৎ আইফোন 16 এ পোর্ট থাকবে না। বিশ্বাস করুন এমন কিছু হচ্ছে না। পোর্ট অবশ্যই থাকছে এবং USB type-C পোর্টই থাকছে।

তারপর আরেকটা বিষয়ে শুনা যাচ্ছিল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ইন-ডিসপ্লে থাকতে পারে বা সাইড মাউন্টেড পাওয়ার বাটনে থাকতে পারে। কিন্তু না, সেরকম কিছুও থাকছে না।

আবার এমন কিছু গুজবও আমরা শুনছিলাম যে ফোল্ডেবল কিছু আসলেও আসতে পারে আইফোনের তরফ থেকে। তবে সেরকমও কিছু থাকছে না। তবে হ্যা, ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন অবশ্যই থাকছে।

আইফোন 16 কি ফোল্ডেবল হচ্ছে?

প্রথমত প্রো এবং নন-প্রো ভ্যারিয়েন্ট থাকছে। এটা তো থাকবেই ভাই। যেমন, আইফোন 16, আইফোন 16 প্লাস, আইফোন 16 প্রো, আইফোন 16 প্রো ম্যাক্স

আইফোন 16 এবং আইফোন 16 প্লাস এই দুইটা ডিভাইসেই বিশেষ পরিবর্তনটা লক্ষ করবেন ক্যামেরা মডিউলে যা ইমেজেই দেখতে পাচ্ছেন।

ক্যামেরার ডিজাইনটা হচ্ছে ভার্টিক্যালি

এতদিন নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে আমরা দেখতাম ডায়াগোনাল ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে। অর্থাৎ তিনদিকে ত্রিভুজাকারের তিনটি ক্যামেরা সেন্সর। কিন্তু এবারের ক্যামেরা সেটআপ হবে ইমেজের মতোই ভার্টিক্যাল।

আইফোন 16 ভার্টিক্যাল ক্যামেরা সেটআপ
ডায়াগোনাল ক্যামেরা সেটআপ : ভার্টিক্যাল ক্যামেরা সেটআপ 

তবে এই যে ভার্টিক্যাল ক্যামেরা, এটার কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনও আছে। কিছুদিন আগে অ্যাপল যে 'ভিসন প্রো' লঞ্চ করল সেটার জন্য স্পেশাল ভিডিও শ্যুট করার প্রয়োজন হয়। ডায়াগোনাল শেপে যদি আপনার ক্যামেরা সেট আপটা থাকে তাহলে আপনি ভিডিও শ্যুটটা করতে পারতেন না নন-প্রো ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে। 

কিন্তু এখন নন-প্রো ভ্যারিয়েন্ট দিয়েও চাইলে ঐ ধরনের ভিডিও শ্যুট নিতে পারেন।

প্রতি বছরই অ্যাপলের ক্যামেরা ইভেন্টকে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করে যে তারা নতুন কি চমক আনল সেটা ঘিরে। বড় বড় ধামাকা দেখানোর ট্রাই করে অ্যাপল।

নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে মেইন ক্যামেরা 48MP এর এবং ওয়াইড এঙ্গেলে ছবি নেওয়ার জন্য 12MP এর শুটার রয়েছে। যেটা দিয়ে এমনকি ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিও করা যাবে।

তবে প্রো ভ্যারিয়েন্টে অর্থাৎ আইফোন 16 প্রো এবং প্রো ম্যাক্সে ক্যামেরাটা হবে 48MP+48MP+12MP এর ক্যামেরা। একই সাথে 5x অপটিক্যাল জুম পাওয়া যাবে পেরিস্কোপ অপটিক্যাল জুম লেন্স এর সাহায্যে।

আইফোন 16 অপটিক্যাল জুম ল্যান্স ক্যামেরা
Photo Credit: APPLE 

বিগত সালে আমরা শুধু আইফোন 15 প্রো ম্যাক্সেই কিন্তু 5x অপটিক্যাল জুম ল্যান্সটাই পেয়েছিলাম। আইফোন 15 প্রো-তে কিন্তু পাই নি। এবার আইফোন 16 প্রোতেও অপটিক্যাল 5x জুম ল্যান্স পেয়ে যাচ্ছেন।

Photo credit: APPLE

এর পাশাপাশি ভিডিওতেও অনেক ইমপ্রুভমেন্ট পাওয়া যাবে বলে শুনা যাচ্ছে। প্রিভিয়াস জেনারেশন থেকে সিনেমাটিক ভিডিওতেও অনেকটা ইমপ্রুভমেন্ট আসবে বলে বলা হচ্ছে।

আইফোন 16 বডি ফ্রেম ডিজাইন

এর বাইরে ডিজাইনে খুব একটা পরিবর্তন দেখবেন না। যেমন স্কয়ার শেপের ফোন, সামনে গ্লাস প্রোটেক্টর রয়েছে, রিয়ার প্যানেলেও গ্লাস আছে এবং বডি ফ্রেমটা মেটালের তৈরি।

তবে নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে অর্থাৎ আইফোন 16 এবং আইফোন 16 প্লাসে টাইটানিয়াম থাকছে না। যাইহোক এর বাইরে আমরা তেমন কিছুই পরিবর্তন দেখছি না আগের জেনারেশন থেকে।

আইফোন 16 সিরিজে যোগ হচ্ছে আরো দুইটা একশন বাটন

কিন্তু নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে দুইটা নতুন বাটন যোগ হতে যাচ্ছে। আইফোনের নতুন এই একশন বাটনটা আমরা পেয়েছিলাম 15 প্রো ভ্যারিয়েন্টে। কিন্তু 16 সিরিজে গিয়ে নন-প্রো এবং প্রো সব ভ্যারিয়েন্টেই এটা পেয়ে যাবেন।

আইফোন 16 নতুন একশন বাটন

পাশাপাশি যোগ হচ্ছে একটা ক্যাপচার বাটন এবং এটা মাল্টি ফাংশনাল বাটন হিসেবে ব্যবহার হবে একই সাথে মাল্টি পারপাসে ব্যবহার করা যাবে। মূলত এটা হলো ছবি তুলার কাজে ব্যবহারের জন্য। আমরা সচরাচর ছবি তুলতে দুইটা হাতই ব্যবহার করি।

এখন ডানহাতের দিকে একটা বাটন থাকলে সুবিধা হয় না? মূলত এই কাজটাই করেছে অ্যাপল। সাইডে ডানহাতের আঙ্গুল বরাবর একটা বাটন সেট করে দিয়েছে। যাতে আরো সহজে এবং বেটার ওয়েতে ছবি তুলতে পারেন বা ভিডিও রেকর্ড করতে পারেন।

এছাড়াও ফটো ক্যাপচারিং বাটনটি হয়তোবা জুম-আউট বা‌ জুম-ইন করতেও ব্যবহার করা যাবে।

এবার চলে আসি পারফরম্যান্স সেকশনে। অর্থাৎ এসুসি বা প্রসেসর কি হতে যাচ্ছে একটু দেখে আসি।

আইফোন 16 কোন প্রসেসর ব্যবহার করতে যাচ্ছে!

লাস্ট কয়েকটা বছরে আমরা দেখছিলাম অ্যাপল তাদের নতুন স্মার্টফোন গুলোর প্রো ভ্যারিয়েন্টে নতুন প্রসেসর চিপ নিয়ে আসে। নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে প্রিভিয়াস জেনারেশনের যে ফ্ল্যাগশিপ চিপটা ছিল ঐটাই থাকত।

কিন্তু এবারে আইফোন 16 এ নতুনত্ব থাকবে, মানে A18 সিরিজের প্রসেসর থাকবে। যা অবশ্যই নতুন প্রসেসর চিপসেট এবং ইন-বিল্ট AI। অ্যাপল যদি প্রিভিয়াস জেনারেশন A17 দিয়ে তাদের নন-প্রো ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আসত তাহলে AI এর যুগে পা দিতে পারত না নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টগুলো।

অর্থাৎ আইফোন 16 এর প্রো ভ্যারিয়েন্টে আমরা AI‌ ফিচারড চিপসেট পেয়ে যাচ্ছি। যেটা আরেকটু পাওয়ারফুল হবে অবশ্যই।

এছাড়াও বিভিন্ন লিক (ফাস হওয়া তথ্য) বলছে নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে আরো 2GB RAM বেশি পাওয়া যাবে। আগে পাওয়া যেত 6GB। আর এখন পাচ্ছেন 8GB। সুতরাং বলতে পারেন একদম লেটেস্ট জেনারেশনের হাই-পাওয়ারড চিপসেট থাকছে আইফোন 16 এর লেটেস্ট স্মার্টফোন গুলোতে।

এবার কথা বলা যাক ডিসপ্লে নিয়ে।

আইফোন 16 এর ডিসপ্লে কেমন হবে?

ডিসপ্লেতেও এবার একটা বড়সড় পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে আইফোন 16 এর নতুন ফোনগুলোতে। যেমন এবার ওরা ব্যবহার করতে যাচ্ছে M14 OLED DISPLAY প্যানেল। সাইজের ক্ষেত্রেও একটু পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে।

আইফোন 16 প্রো-তে এবার পাওয়া ডিসপ্লে পাওয়া যাবে 6.3inch সাইজের যেখানে গত বছরের আইফোন 15 প্রো-তে ছিল 6.1inch ডিসপ্লে।

আবার আইফোন 16 প্রো ম্যাক্সে পাওয়া যাবে 6.9inch এর ডিসপ্লে যেখানে আইফোন 15 প্রো-ম্যাক্সে ছিল 6.7inch এর ডিসপ্লে। ফোনটা এবার আরেকটু লম্বা হতে যাচ্ছে। এমনটাও শুনা যাচ্ছে যে চিন-ভেজেল আরো সরু করা হবে। তাহলেতো স্বাভাবিকভাবেই ডিসপ্লে এরিয়াটা আরো বড় হবে।

তবে নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে 6.1 এবং 6.7 ইঞ্চিই থাকছে।

এবার আইফোন 16 এ M14 OLED Panel ব্যবহার করায় স্বাভাবিকভাবে ডিসপ্লের লাইফস্প্যানও বেড়ে যাচ্ছে এবং ডিসপ্লে ব্রাইটনেসও স্বাভাবিকের তুলনায় প্রিভিয়াস জেনারেশনের চেয়ে বেশি পাওয়া যাবে।

রিফ্রেশ রেট কেমন হবে?

যতটুকু শুনা যাচ্ছে এবারেও আপনারা নন-প্রো ভ্যারিয়েন্টে হাই রিফ্রেশ রেট নাও পেতে পারেন। যদি তেমনটা হয় সত্যিই এটা ভালো হবে না। তবে প্রো ভ্যারিয়েন্টে অবশ্যই 120Hz রিফ্রেশ রেট পাওয়া যাবে।

ব্যাটারির বেলায় এসে কি হবে আইফোন 16 এর ?

ব্যাটারির পাওয়ারও এবার মনে হয় বাড়তে যাচ্ছে এবং একই সাথে চার্জারটও একটু বড় হতে যাচ্ছে। ফাইনালি আইফোন 16, 40W এর মতো চার্জিং সাপোর্ট নিতে যাচ্ছে।আইফোন 16 এবং আইফোন 16 প্রো-ম্যাক্স এর বেলায়ও একই।

ফাইনালি একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, দামে কি বাড়বে আইফোন 16।

আইফোন 16 এর দাম কেমন হতে পারে?

হয়তো প্রো ভ্যারিয়েন্টের আইফোন 16-প্রো এর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। হয়তো আইফোন 16 প্রো-ম্যাক্স এর দাম আহামরি তেমন নাও বাড়তে পারে বা অনেক সিমিলারিটিজ থাকবে।

আরো দেখুন,

শেষকথা

আসলে এখনো পর্যন্ত শিওর না। সবাই কিছুটা কনফিউশনে আছে। বিভিন্ন লিক থেকে এসব ইনফো আমরা জানতে পারছি। আদৌ কি এমন কিছু হবে নাকি আরো বড় কিছু হতে যাচ্ছে আইফোন 16 রিলিজ হলেই জানা যাবে।

তবে অ্যাপল বা স্যামসাংয়ের ক্ষেত্রে এসব লিকগুলো অর্থাৎ রিলিজ হওয়ার আগে শোনা কথাগুলো অধিকাংশই মিলে যায়।

দেখা যাক, আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। তাই পরামর্শ থাকবে যারা আইফোন 15 সিরিজের ফোনগুলো কিনতে চাচ্ছেন তারা আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন। একেবারে 16 নিয়ে নিতে পারবেন।

সোর্স: SamZone

Post a Comment

0 Comments