ব্যাটারি ড্রেইন হচ্ছে? যে ৭টি উপায়ে ল্যাপটপ ব্যাটারি ভালো রাখবেন

অনেক শখ করে বাজার থেকে পছন্দের একটা ল্যাপটপ কিনে নিয়ে আসলেন নিজের জন্য। কিন্তু দেখা গেল কিছুদিন যেতে না যেতেই আগের মতো আর ব্যাটারি ব্যাকআপ পাচ্ছেন না। কেমন লাগবে আপনার? আজকে ল্যাপটপ ব্যাটারি ভালো রাখার ৭ টি উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করি ধৈর্য্যের সাথে পুরো আর্টিকেলটি পড়বেন। আপনার ল্যাপটপের উপকার হবে।

ল্যাপটপ ব্যাটারি ভালো রাখার ৭ উপায়

এমন হয় যে, প্রথম দিকে ল্যাপটপ কিনে নিয়ে আসার পর চরম লেভেলের ব্যাটারি হেলথ থাকে। খুব ভালো লং লাস্টিং ব্যাটারি ব্যাকআপ পান। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই এর ব্যাটারি ড্রেইনিং শুরু হয়, অর্থাৎ ব্যাটারি পারফরম্যান্স মাটির তলায় গিয়ে ঠেকে।

আপনি যত ভালো ব্র্যান্ডের যত নামিদামি ল্যাপটপ কিনেন না কেন কিছু রুলস মেইনটেইন না করে ব্যবহার করলে ব্যাটারি পারফরম্যান্স তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। চলুন শুরু করা যাক ব্যাটারি ভালো রাখার ৭ উপায় নিয়ে।

টিপস - ১: রেগুলার ব্যাটারি হেলথ চেক করা

ল্যাপটপ আপনার। আপনি যদি নিজেই না জানেন আসলে ল্যাপটপের ব্যাটারি হেলথ কতটুকু, তাহলেতো অনেক বেশি হতাশ হয়ে যেতে হয়। আপনার ল্যাপটপ যদি অ্যাপলের ম্যাকবুক হয় তাহলে খুব সহজেই ব্যাটারি হেলথ চেক করতে পারবেন। কিন্তু উইন্ডোজ ল্যাপটপ হলে এটা একটু ঝামেলার। চিন্তার কারণ নেই, একটি ট্রিকসের মাধ্যমে এটা খুব সহজেই পারবেন।

উইন্ডোজ ল্যাপটপে যেভাবে ব্যাটারি হেলথ চেক করবেন 

প্রথমে ল্যাপটপের 'Start' অপশনে যাবেন। সেখানে সার্চ বারে 'Command prompt' লিখলে যে অ্যাপ্লিকেশনটি আসবে সেটিতে ডাবল ক্লিক করে চালু করবেন।

নিচের ইমেজের মতো powercfg /batteryreport লিখে এন্টার বাটন প্রেস করবেন।

তারপর আপনার C-drive এর system 32 এর ভিতরে একটি html ফাইল ওপেন হবে Battery Report নামে।

সেটা ওপেন করলে ব্যাটারির সমস্ত স্ট্যাটিস্টিকস শো করবে। ব্যাটারি হেলথ থেকে শুরু করে ব্যাটারির যত ডিটেইলস আছে সব পেয়ে যাবেন।

আশা করি ব্যাটারি হেলথ চেক করতে পেরেছেন।

টিপস - ২: চার্জার কানেক্ট করে নেওয়া

ল্যাপটপে আপনি যখনই ইন্টেন্সিভ কিছু কাজ করবেন যেমন, গেমিং, ভিডিও এডিটিং বা এধরনের ভারি কোন কাজ ইত্যাদি। তখন চার্জারটা কানেক্ট করে নিবেন। এর কারণ হলো আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি যদি খুব তাড়াতাড়ি ডিসচার্জ হয় এবং আপনি যদি আবার চার্জ দেন, তাহলে এ ধরনের ঘন ঘন চার্জ বা ডিসচার্জের জন্য ব্যাটারি হেলথ আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

একবার চার্জিং আর ডিসচার্জিংকে সাইকেল বলে। এ ধরনের সাইক্লিং যত কমাতে পারবেন আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারির লাইফস্প্যান তত বাড়বে। সে কারণে ইন্টেন্সিভ কাজ করার সময় চার্জারটা লাগিয়ে নিবেন যাতে ব্যাটারি ডিসচার্জ হতে না পারে। এভাবে ব্যাটারির লাইফস্প্যানও অনেক বেড়ে যাবে।

টিপস - ৩: ল্যাপটপ কুল রাখুন

ল্যাপটপকে যথাসম্ভব কুল রাখার চেষ্টা করুন। এই বদঅভ্যাসটা আমাদের অনেকেরই আছে যে ল্যাপটপকে আমরা কোলের ওপর রেখে ব্যাবহার করি। এতে করে নিচের দিকে থাকা ল্যাপটপের এয়ার ইন্টেকের ভ্যান্টগুলি অর্থাৎ যেগুলো দিয়ে বাতাস চলাচল করে, অনেক বেশি গরম হয়ে যায়। বাতাস প্রোপারলি পাস হতে পারে না।

পড়তে থাকুন

আবার আমরা অনেকেই আছি যারা এক্সটার্নাল মাউস এবং কিবোর্ড ব্যবহার করি। একবারও ফিল করি না যে, ল্যাপটপ একট্রিম পরিমানে গরম হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ব্যাটারির হেলথ অনেক কমে গিয়ে আস্তে আস্তে ডেমেজড হতে থাকে।

খুব বেশি গরম আবহাওয়ায় অর্থাৎ রোদ আছে এমন জায়গায় গিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না। ভারী কাজ করার সময় যদি দেখেন ব্যাটারি অত্যাধিক গরম হয়ে যাচ্ছে, তাহলে মাঝখানে বিরতি দিয়ে ব্যাটারি কুল হয়ে গেলে আবার কাজ শুরু করুন।

খুবই ভালো হয় যদি বাজার থেকে ল্যাপটপ কুলার কিনে এনে ব্যবহার করতে পারেন। খুব বেশি দাম না। কুলারের ল্যাপটপের নিচে ক্যাবল দিয়ে ফিট করে ব্যবহার করলে আপনার ল্যাপটপও কুল থাকল এবং ব্যাটারির লাইফস্প্যানও বাড়ল।

ল্যাপটপ কুলার
ল্যাপটপ কুলার
Image source: And360

টিপস - ৪: চার্জিং লেভেল একটি নির্দিষ্ট সীমায় রাখুন

আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি চার্জ ২০% থেকে ৮০% সীমায় রাখুন। ল্যাপটপের চার্জ একদম ফুল চার্জ বা ১০০% বা একদম লো চার্জ বা ১% এ নিয়ে যাওয়া উচিত না।

বেস্ট প্র্যাকটিস হলো ২০% থেকে ৮০% এর মধ্যে রাখা। এভাবে রাখলে ব্যাটারি ব্যাকআপ দীর্ঘদিন পাবেন।

টিপস - ৫: বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যাটারি চার্জ অর্ধেক রাখুন

হয়তো অবাক হয়েছেন বিশেষ ক্ষেত্রে কেন বললাম। যদি আপনার ল্যাপটপ দীর্ঘদিনের জন্য অব্যবহৃত অবস্থায় রেখে দেন, যেমন এক সপ্তাহ ল্যাপটপে কোন কাজ করবেন না বা দীর্ঘ একমাস কোন কাজ না থাকায় ল্যাপটপ টাচও করবেন না। অথবা যারা সময়ে সময়ে ওকেশনালি ল্যাপটপ ওপেন করেন তারা ল্যাপটপ চার্জ অর্ধেক অর্থাৎ ৫০% করে তারপর রেখে দিবেন।

ল্যাপটপ দীর্ঘ সময়ের জন্য রেখে দিতে হলে ১০০% ফুল চার্জও করবেন না। আবার লো চার্জেও রেখে দিবেন না। মাঝপথে রাখবেন অর্থাৎ ৫০% চার্জ করে। যাতে ব্যাটারিটা ভালো থাকে।

টিপস - ৬: পাওয়ার সেভিং মুড অন রাখবেন

যখনই আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি চার্জ খানিকটা লো তে নেমে আসবে, জাস্ট পাওয়ার সেভিং মুডটা অন করে দিবেন। অনেক ল্যাপটপে এটা Battery Saver নামেও পরিচিত। যার ফলে ল্যাপটপ ব্যাটারি চার্জ অনেক কম কনজিউম করবে, ব্যাকগ্রাউন্ডের অনেক প্রসেসকে লিমিট করে দিবে এবং চার্জটা অত দ্রুত ফুরাবে না।

এটা যদিও একটা ছোট কাজ, ওভারঅল ব্যাটারি হেলথের ক্ষেত্রে এটার ইনফ্লুয়েন্স অনেক।

টিপস - ৭: অফিসিয়ালি এপ্রুভড চার্জার বা ব্যাটারি কিনবেন

কখনো যদি আপনি ব্যাটারি বা চার্জার চেঞ্জ করতে চান তাহলে এটা নিশ্চিত করবেন যেন আপনার ল্যাপটপ যে ব্র্যান্ডের, নতুন কিনতে যাওয়া চার্জার বা ব্যাটারিও যেন একই ব্র্যান্ডের অফিসিয়ালি‌ এপ্রুভড হয়। থার্ড পার্টি কোন ব্যাটারি বা চার্জার কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিবেন কোম্পানিটি রেপুটেড কিনা। অর্থাৎ ল্যাপটপ জগতে তাদের নামডাক ভালো আছে কিনা।

এভাবে ল্যাপটপের জিনিসপত্র কেনার সময় সতর্কতা মেইনটেইন করলে বেস্ট ব্যাটারি পারফরম্যান্স পাবেন।

শেষকথা

এই ছিল ল্যাপটপ ব্যাটারি ভালো রাখার ৭টি উপায়। সবই সিম্পল এন্ড ইজি। তবে একটা নিরেট সত্য কথা হলো, আমরা যে ল্যাপটপ বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো ব্যবহার করি তাদের ব্যাটারিগুলো হলো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি।

লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির বৈশিষ্ট্যই হলো এটার আস্তে আস্তে আয়ু ফুরাবে। এটার ভিতর যে সেলগুলো থাকে এটা আস্তে আস্তে নষ্ট হবেই। এটা খুব নরমাল একটা ব্যাপার। সো আপনি একটা নতুন কিনে আনা ল্যাপটপ থেকে যে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন ছয়মাস পর কিন্তু সেটা পাবেন না যতই চেষ্টা করেন না কেন।

আরো দেখুন,

কিন্তু এই যে আয়ু ফুরাবার যে প্রসেসটা, এটাকে আপনি চাইলে ল্যাপটপ ব্যাটারি ভালো রাখার ৭টি উপায় ফলো করে একটু স্লো করে দিতে পারেন। কিন্তু কখনোই মনে করবেন না যে আপনি আজীবন একটি ল্যাপটপ বা ব্যাটারি ইউজ করতে পারবেন।

সোর্স: Sohag360

Post a Comment

0 Comments