বর্তমান ডিজিটাল যুগেও আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বহুলাংশে ডিজিটালি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ঘরে বাইরে অফিসে ইত্যাদি জায়গাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে হয়। তাই আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব জনপ্রিয় IMOU কোম্পানির সেরা তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ে। যেগুলোর পারফরম্যান্সে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সিকিউরিটি ক্যামেরা ব্যবহার এক প্রকার বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ইউটিউবারদের একটা স্টুডিওতেই থাকে চার পাঁচটি সিসি ক্যামেরা। বর্তমানে চুরির মতো আরো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সিসি ক্যামেরার বদৌলতে ধরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে IMOU এর সেরা তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা বা সিকিউরিটি ক্যামেরার সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই।
এই তিনটি ক্যামেরা একই সাথে হাই পারফর্মিং এবং অনেক ব্যতিক্রমী ফিচারসযুক্ত। আপনার ঘর বাহিরকে সমানতালে হাই সিকিউরিটি দিবে IMOU এর এসব সিসিটিভি ক্যামেরা। আমরা যে তিনটি ক্যামেরা নিয়ে কথা বলব তার দুটি আউটডোরের জন্য এবং একটি ইনডোরের জন্য অপটিমাইজড। চলুন শুরু করা যাক। আর হ্যা, এই ক্যামেরাগুলো কিনলে আপনি সাথে একটা ব্যাগ ফ্রিতে পেয়ে যাচ্ছেন। ব্যাগটার কোয়ালিটি আমার ভালোই মনে হয়েছে।
প্রথমেই কথা বলি IMOU Ranger 2 নিয়ে।
IMOU Ranger 2 প্রাইস ইন বাংলাদেশ
IMOU Ranger 2 হল ইনডোরে ব্যবহারের জন্য এবং ছোট সাইজের একটা ক্যামেরা এবং বাংলাদেশে IMOU Ranger 2এর দাম ২৫৯০ টাকা। সাথে অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিতো আছেই।
IMOU Ranger 2 Photo credit: SamZone |
এই ক্যামেরা দিয়ে আমরা 1080P তে লাইভ মনিটরিং করতে পারব। এছাড়া Pan, tilt ইত্যাদি ফিচারতো আছেই। অর্থাৎ অ্যাপের মাধ্যমে কানেক্ট করেই অ্যাপের মাধ্যমে যেকোন জায়গায় বসে ক্যামেরাটাকে আপনি চাইলে যেকোনো দিকে ঘুরাতে পারবেন।
IMOU Ranger 2 তে রয়েছে স্মার্ট ট্র্যাকিং ফিচার। মানে ক্যামেরাটি যেকোন অবজেক্টকে চাইলে ট্র্যাকও করতে পারবে। অর্থাৎ ধরেন আপনার বাসায় বা অফিসে অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ প্রবেশ করল। এখন আপনি চাচ্ছেন ও কি করে সবকিছু দেখতে। তাহলে ক্যামেরাটি অবজেক্টকে ফোকাসে রেখে লাইভ মনিটরিংয়ে আপনাকে সব দেখাবে।
তাছাড়া এবনরমাল সাউন্ড এলার্টও দিতে পারে এটি। IMOU Ranger 2 তে আপনি চাইলে 256GB স্টোরেজের মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললে মনিটরিং এ থাকা ব্যক্তিটি শুনতে পাবে এবং মনিটরিংয়ের ব্যক্তিটি কথা বললে imou ranger 2 এর স্পিকারের মাধ্যমে তা শুনা যাবে Photo credit: SamZone |
এর মাধ্যমে two way তে কথা বলা যাবে। ক্যামেরার সামনে বসে কথা বললে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি অর্থাৎ যে অ্যাপের মাধ্যমে মনিটরিং করছে সে কথা শুনতে পাবে।
আবার যে মনিটরিং করছে সেও চাইলে ক্যামেরাটির মাধ্যমে কথা বলতে পারবে। কারণ IMOU Ranger 2 তে রয়েছে বিল্ট ইন স্পিকার। IMOU Ranger 2 এর সমধর্মী অনেক সিসি ক্যামেরাতেই নরমালি সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো হয় না। তবে এটাতে সাউন্ড কোয়ালিটি তুলনামূলক ভালো।
IMOU Ranger 2 এর ক্যামেরা সেন্সরটা হলো 2MP এর এবং একই সাথে নাইট ভিশন সাপোর্ট করে। 10 মিটারের মধ্যে এটা ঠিকঠাক রেজাল্ট দিচ্ছে। তো আমার মনে হয় ইনডোরের জন্য 10 মিটার পারফেক্ট। অর্থাৎ আপনি তো একটা রুম বা এরকম কিছু পাহারা দেওয়ার জন্যই সিকিউরিটি ক্যামেরা বসাবেন। তাই 10 মিটার কাভারেজই এনাফ হবে।
এটাকে স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করতে হবে। তো এটিকে কানেক্ট করতে গিয়েও প্রবলেম ফেস করতে হয় নি। জাস্ট IMOU Life অ্যাপটা ইনস্টল করে নিবেন। তারপর IMOU Ranger 2 ক্যামেরাটির তলায় QR কোড দেওয়া আছে। এটা স্ক্যান করে কানেক্ট করে নিবেন।
আশা করি ইনডোরের জন্য ক্যামেরাটি কতটা পারফেক্ট তার একটা ধারণা পেয়েছেন। আর রুমে যদি ঠিকঠাক লাইট থাকে তাহলে খুব ডিটেইল ভিডিও আসে। আবার ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেলে এর নাইট ভিশন মোডটা অন হয়ে যায় এবং 10 মিটারসের মধ্যে খুব ভালো রেজাল্ট দেয়। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও অবজেক্টকে ভালোমতোই চেনা যায়।
IMOU Ranger 2 এর নাইট ভিশন ফুটেজ Photo credit: SamZone |
আর এটা যেহেতু একটা ক্যামেরা এবং সারাক্ষণই চলবে। অনেক সময় দেখা যায় কিছু কিছু ক্যামেরা খুব হিট জেনারেট করতে থাকে। কিন্তু IMOU Ranger 2 তে এই ধরনের প্রবলেম ফেস করা যায় নি। এটা হালকা গরম হয়, খুব বেশি না।
আরেকটা বিষয়ে ক্যামেরাটি এগিয়ে থাকবে। সেটা হলো ক্যামেরাটিকে যেমন ওয়াইফাই দিয়ে কানেক্ট করা যাবে তেমনি ক্যাবল দিয়েও কানেক্ট করা যাবে।
তবে এখনকার যুগে সব টাইপ-সি তে চলে আসছে। এখানেও টাইপ-সি থাকা উচিত ছিল। এই জায়গাটাতে একটু কমতি লক্ষ্য করা গেছে।
তবে 2500 টাকার আশেপাশে যে সমস্ত ক্যামেরাগুলো পাওয়া যায় তার সাথে কমপেয়ার করতে গেলে অনেক কিছুতেই IMOU Ranger 2 এগিয়ে থাকবে।
আরেকটা ব্যাপারতো বলাই হলো না, এর বক্সে আপনারা চার্জার পেয়ে যাবেন। যেখানে ম্যাক্সিমাম এ ধরনের ক্যামেরার সাথে চার্জার দেওয়া হয় না।
এবার আমরা পরবর্তী ক্যামেরার দিকে চলে যায় এবং এটা হলো IMOU BULLET 2E। বলা যায় IMOU Ranger 2 এর বড় ভাই।
IMOU BULLET 2E প্রাইস ইন বাংলাদেশ
এই ক্যামেরাটা আরেকটু প্রফেশনাল গ্রেডের এবং আউটডোর সিকিউরিটি ক্যামেরা। এটা সরাসরি কোন সমস্যা ছাড়াই আউটডোরে ব্যবহার করতে পারবেন কারণ IP Rating আছে।
এটাতেও সেইমভাবে ক্যাবলের মাধ্যমে বা ওয়াইফাই দিয়ে ইন্টারনেট কানেক্ট করতে পারবেন এবং বক্সের ভেতরে চার্জার পেয়ে যাচ্ছেন।
IMOU BULLET 2E যেহেতু আউটডোরে ব্যবহার করবেন এবং রেঞ্জ বেশি দরকার হবে তাই এটিতে ওয়াইফাই সিগন্যাল ক্যাপচার করার জন্য এন্টেনা দেওয়া আছে, ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন।
আউটডোরে IMOU BULLET 2E Photo credit: SamZone |
এটা হাতে নিয়ে বা ধরে দেখলে বুঝতে পারবেন এটার বিল্ট কোয়ালিটি আগেরটার চেয়ে অনেক ভালো। প্লাস্টিক কোয়ালিটিও অনেক বেশি বেটার এবং মেটাল পার্টও রয়েছে এটাতে।
এটার যে স্ট্যান্ডটা যেটা দিয়ে দেওয়াল দিয়ে বা অন্য কিছুর সাথে হ্যাং করা থাকবে, এটা মেটাল দিয়ে তৈরি। বাংলাদেশে IMOU BULLET 2E এর দাম হলো 3449 টাকা। ক্যামেরাটিতে রয়েছে IP 67 রেটিং অর্থাৎ এটি পানির ঝাপটা প্রতিরোধী। যেহেতু ক্যামেরাটিকে আউটডোরেই ব্যবহার করবেন সেহেতু অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা প্রতিরোধ করেই একে টিকে থাকতে হবে। সেভাবেই একে বানানো হয়েছে।
IMOU BULLET 2E দিয়ে 1080P তে লাইভ মনিটরিং করতে পারবেন। আর এটাতেও স্মার্ট নাইট ভিশন ফিচারটা আছে। অন্ধকার হলে অটোমেটিক নাইট ভিশন মোড অন হয়ে যাবে।
সেইমভাবেই রয়েছে হিউম্যান ডিটেকশন ফিচারটি। 256GB স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারবেন এটাতেও আগেরটার মতোই। ক্যামেরাটাও 2MP এর।
তবে নাইট ভিশনে এট আরো শক্তিশালী। যেহেতু আউটডোরে ব্যবহার করবেন তাই একটু বেশি জায়গা কাভারেজ দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তাই IMOU BULLET 2E নাইট ভিশন হিসেবে প্রায় 30 মিটার বা 98 ফিট জায়গা পর্যন্ত কাভারেজ দিতে পারবে। যেটা কিন্তু মোটেই কম না।
বাকি ফিচারগুলো আগেরটার মতো সেইম এটাতেও। তবে এটার ওয়াইফাই রিসেপশনটা বেশ স্ট্রং, যেহেতু এন্টেনা আছে। নাইট ভিশনে অনেক ক্লিয়ার এবং অবজেক্টিভ মনিটরিং সাপোর্ট করে।
এবার চলুন ফাইনালি এই দুইটি ক্যামেরারই বড় ভাই বা আব্বা IMOU CRUISER 2 নিয়ে কথা বলি। আমার মনে হয় রিভিউটা পড়ে খুব চমৎকৃত হবেন।
IMOU CRUISER 2 প্রাইস ইন বাংলাদেশ
আউটডোরে আরো ভালো, আরো হাই পারফর্মিং রেজাল্ট দেয় এটি। আউটডোরের জন্যই ডিজাইন করা এটি। ছবিতে দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কতটা প্রফেশনাল লুকিং এটার। তবে জিনিসটা দেখার পর পুরোটাই রোবোটিক মনে হয়েছে আমার।
IMOU CRUISER 2 Photo credit: SamZone |
এটার বিল্ট ম্যাটেরিয়ালস অবশ্যই ভালো। হাই ক্লাস প্লাস্টিক বিল্ট এর বডি। এটাতেও ওয়াইফাই রিসেপশন এন্টেনা আছে, যেহেতু আউটডোরে ব্যবহার হবে। তবে এটাকেও চাইলে ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট করতে পারবেন।
এই ক্যামেরাটা যে কতটা প্রফেশনাল লেবেলের এটার লুক এবং রেজাল্ট দেখে সহজেই অনুমান করতে পারবেন। এটার দামও বেশ কিছুটা বেশি আগের দুইটার তুলনায়।
বাংলাদেশে IMOU CRUISER 2 সিসিটিভি ক্যামেরার দাম 6,699 টাকা। তবে IMOU CRUISER 2 আপনারা অফিস বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পারপাসে ব্যবহার করতে পারেন সহজেই।
IMOU CRUISER 2 এর 3MP এর ক্যামেরাটি 2K রেজ্যুলেশনে আউটপুট দিতে পারে। এটার কোয়ালিটি আগের দুইটার তুলনায় অবশ্যই বেটার। বেশ ডিটেইল এবং অনেকটাই ব্রাইট টাইপের ফুটেজ দেয়। ওয়াইফাই এন্টেনাও আছে।
আবার আগের দুইটা ক্যামেরার চাইতে IMOU CRUISER 2 এর নাইট ভিশনও বেশ ভালো রেজাল্ট দিচ্ছিল। By the way, এর নাইট ভিশন কিন্তু কালারড। মানে আপনারা অন্ধকারেও কালারফুল নাইট ভিশন ফুটেজ পাবেন।
IMOU CRUISER 2 এর কালারড নাইট ভিশন ফুটেজ Photo credit: SamZone |
প্রথম ইনডোর ক্যামেরাটিতে আমরা সাদা কালো নাইট ভিশন পেয়েছি। কিন্তু পরের ক্যামেরা দুটি দিয়ে বেশ কালারফুল নাইট ভিশন পেয়েছি আমরা।
দিনে রাতে সবসময় বেশ ডিটেইল ভিডিও পাওয়া যায় IMOU CRUISER 2 থেকে। IP 66 এর রেটিং রয়েছে। মানে পানির শক্ত ঝাপটা এবং খুব জোরে বয়ে যাওয়া বাতাস প্রতিরোধী।
IMOU CRUISER 2 ক্যাবল ইন্টারনেট কানেকশন Photo credit: SamZone |
অন্যান্য ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে হিউম্যান ডিটেকশন এবং ভেহিক্যাল ডিটেকশন। CRUISER 2, 22 মিটারের মধ্যে হিউম্যান ডিটেকশন এবং 44 মিটারের যধ্যে যেকোন কারকে ডিটেক্ট করতে পারে।
এছাড়াও স্মার্ট ট্র্যাকিং এবং টু ওয়ে টকিং এর ফিচারটাতো থাকছেই।
শেষকথা
এবার দেখুন, তিনটা ক্যামেরাই কিন্তু তিন টাইপের মানুষজনদেরই প্রয়োজন হবে। আপনার যদি ইনডোরের জন্য সিসি ক্যামেরার দরকার হয় তাহলে প্রথম IMOU Ranger 2 ই নিতে পারেন।
যদি একটু কম দামের মধ্যে আউটডোরের জন্য ভালো ক্যামেরা চান তাহলে IMOU BULLET 2E আপনার জন্য পারফেক্ট অপশন।
আরো দেখুন,
- ওয়াইফাই রাউটার কিনতে চান? ৭টি বিষয় যাচাইয়ের আগে কিনলে ঠকবেন
- ল্যাপটপ বাছাইয়ে দ্বিধা? আপনার বাজেটে সবচেয়ে ভালো ল্যাপটপ কিনুন ১৩ টি উপায়ে
আর যদি আপনার মনে হয় যে ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে ব্যবহারের জন্য আরো ভালো আউটডোর সিসিটিভি ক্যামেরা প্রয়োজন, then go for IMOU CRUISER 2। কারণ খুব ভালো নাইট ভিশন ফুটেজ এবং লং আউটডোর কাভারেজ।
এই তিনটা ক্যামেরার সাথে আপনারা 2 years warranty পেয়ে যাচ্ছেন। এটা কিন্তু অনেক বড় একটা সাপোর্ট। যেহেতু আপনি ক্যামেরাগুলো সবসময়ের জন্যই ব্যবহার করতে চাইবেন তাই অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি থাকলে আমাদের জন্য অবশ্যই বাড়তি সুবিধা হয়।
তো কোন ক্যামেরাটা পছন্দ হয়েছে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আর আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের নিচে ফাইভ স্টার রেটিং দিন।
Reviewed by: SamZone
0 Comments