স্বনামধন্য এন্ড্রয়েড ব্র্যান্ড স্যামসাং তাদের আরো একটি ফোন Samsung Galaxy A15 নামে বাজারে নিয়ে এসেছে। আমার মনে হয় একমাত্র এই ফোনটি মিড বাজেটের মধ্যে আপনার সব চাহিদা মেটাতে যাচ্ছে। আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়লেই বুঝতে পারবেন। তাই আপনার কাছে অনুরোধ Samsung Galaxy A15 কেনার আগে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে যাতে ঠকতে না হয়।
Samsung Galaxy A15 |
ফোনটির মূল রিভিউতে যাওয়ার আগে এর ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে একটু বলে নিই। এর RAM পাওয়া যায় তিনটা ভ্যারিয়েন্টে 4GB, 6GB এবং 8GB। স্টোরেজ রয়েছে 128GB। বাংলাদেশে এর বেস ভ্যারিয়েন্ট অর্থাৎ Samsung Galaxy A15 এর দাম তথা 4/128GB আপনারা পাচ্ছেন 17000+ টাকা দিয়ে। 17000+ টাকা থেকে এর সর্বোচ্চ ভ্যারিয়েন্ট 8/128GB পাবেন 23000 টাকার আশেপাশেই।
পনের থেকে বিশ হাজার টাকার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষজন প্রচুর স্মার্টফোন কিনে। এই প্রাইস পয়েন্টে যদি ভালো ব্র্যান্ডের একটি স্মার্টফোন পাওয়া যায় এবং যেখানে কিনা আমরা 4 বছরের একটা এন্ড্রয়েড আপডেট পেতে পারি, অবশ্যই ভালো প্রসেসর এবং আল্ট্রাওয়াইড শ্যুটার আছে, মেইন ক্যামেরাটা ভালো হতে হবে, Super AMOLED প্যানেল হতে হবে, Full HD+ রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লে থাকতে হবে, হাই refresh rate থাকতে হবে, ভালো ব্রাইটনেস থাকতে হবে।
তো এরকম সর্বগুণে গুণান্বিত প্যাকেজ ওয়ালা স্মার্টফোন সচরাচর পাওয়া যায় না। কিন্তু আমরা আজকে যে প্যাকেজটি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি অর্থাৎ Samsung Galaxy A15, এই ডিভাইসটা 17000 টাকা প্রাইস পয়েন্টে এতকিছু দিচ্ছে।
তাহলে শুরুতেই আপনারা Samsung Galaxy A15 এর ভালো দিকগুলো সম্পর্কে আইডিয়া পেলেন। এবার চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
Samsung Galaxy A15 এর ডিজাইন
Samsung Galaxy A15 বক্সসহ |
উপরের ইমেজটিতে দেখানো বক্সের মতোই আসলে Samsung Galaxy A15 এর বক্স অনেক স্লিম। তবে এখানে আপনি চার্জারটি পাচ্ছেন না। চার্জার হয়তো থাকতে হবে বা কিনে নিতে হবে আর কি।
ডিভাইসটি দেখতে হুবহু Samsung Galaxy A55 বা A35 এর মতোই। একদমই সিমিলার টাইপের ডিজাইন। সো ডিজাইনওয়াইজ বলতে পারেন আপনি অর্ধেক দামেই ঐরকম কিছু পেয়ে যাচ্ছেন আর কি। বডি ফ্রেমটাও সম্পূর্ণ প্লাস্টিকের তৈরি।
পাশের পাওয়ার বাটনটাই ফিজিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার হিসেবে কাজ করে। ঐ যে বাজেট ফোনের ফিলটা আপনি বুঝতে পারবেন এ সমস্ত জায়গাগুলোতে। তবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার খুবই ফাস্ট এবং অ্যাকুরেট। এবার কথা বলা যাক এর ডিসপ্লে নিয়ে।
Samsung Galaxy A15 এর সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার |
Samsung Galaxy A15 এর ডিসপ্লে
Samsung Galaxy A15 এর সামনে অর্থাৎ ডিসপ্লেতে ওয়াটার ড্রপ আছে। আমার মনে হয় ২০২৪ এর এই সময়ে এসে এটা একটু বেমানান লাগবে। তবে এই ব্যাপারটা যদি কনসিডার করতে পারেন তাহলে এর ডিসপ্লে আপনার ভালো লাগবেই। কারণ স্যামসাং তাদের নিজস্ব Super AMOLED প্যানেল এখানে ব্যবহার করেছে। যার রেজ্যুলেশন আবার Full HD+ এবং 90Hz রিফ্রেশ রেটের।
Samsung Galaxy A15 এর ডিসপ্লে |
আমাদের টেস্টিংয়ে এর রিফ্রেশ রেট নিয়ে কোন প্রবলেম ফেস করতে হয় নি।
আর স্যামসাং এর কালার আউটপুট কেমন তা তো আপনারা জানেনই। পাশাপাশি আমরা Full HD+ রেজ্যুলেশন পেয়েছি। সেখানেও কোন কমতি নেই। আর এটার Peak brightness হলো 800nits। যেটা ইনডোরের জন্যতো একদমই ঠিকঠাক।
ইভেন আউটডোরেও ঠিকঠাক ছিল। তবে ডিরেক্ট সানলাইটে অতটা কমফোর্টের সাথে আপনি ইউজ করতে পারবেন না। একটু মনে হবে কম, আরেকটু হলে ভালো হতো এমন আপনার কাছে লাগতে পারে।
আরেকটা বিষয় আপনার একটু চোখে লাগতে পারে সেটা হলো ডিসপ্লের চারপাশের ভেজেল। ভেজেলটা একটু মোটাসোটাই। যদিও এরকম প্রাইস পয়েন্টে এসব বিষয়ের সাথে আমরা অভ্যস্ত। তবে WIDEVINE L1 এর সাপোর্ট আছে এই ডিভাইসে। সুতরাং মোটামুটি সবকিছুই পেয়ে যাচ্ছেন।
আমার মনে হয় ওয়াটার ড্রপ আর ভেজেল এরিয়া এই দুইটা বিষয়ের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে পারলে এর ডিসপ্লেকে কোনভাবেই আপনি খারাপ বলতে পারছেন না। যেখানে 27 বা 28 হাজার টাকার ফোনেও সুপার অ্যামোলেড প্যানেল থাকে না সেখানে এই ফোনে আপনি সেটা পেয়ে যাচ্ছেন।
অনেক ঘাটাঘাটি করেও জানতে পারলাম না এই ফোনটার ডিসপ্লেতে প্রোটেক্টর আছে কিনা। তাই চাইলে একটা প্রোটেক্টর ইউজ করতেই পারেন।
Samsung Galaxy A15 এর সফটওয়্যার খুঁটিনাটি
এই ফোনটা কেনার জন্য আপনাদের প্রধান একটা কারণ হতে পারে এর সফটওয়্যার আপডেটের বিষয়গুলো। স্যামসাং ক্লেইম করছে তারা এই ফোনটাতে চার চারটা মেজর আপডেট দিবে এবং পাঁচ বছরের সিকিউরিটি আপডেট দিবে।
Samsung Galaxy A15 কে রান করছে ONEUI 6 বেসড অন Android 14। অর্থাৎ চারটা মেজর আপডেট যদি স্যামসাং দেয়, তাহলে এখন আপনি Android 14 এ থাকলে Android 18 পর্যন্ত ফ্রিতে আপডেট পেয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপারটা খুবই ভালো এবং চমৎকার।
তাছাড়া আমরা সবাই স্যামসাংয়ের UI সম্পর্কে জানি। বিশেষ করে OneUI খুবই ক্লিন এবং স্মুথ একটা UI।কোন আপডেটেই তাদের UI এ তেমন কোন সমস্যা স্লো হয়ে যাওয়া, গ্রিন লাইন পড়া ইত্যাদি দেখা দেয় না। সাধারণত লং টাইমে বাজেট ফ্রেন্ডলি স্মার্টফোন গুলা স্লো হয়ে যায় বা আরো অনেক লেকিংস দেখা যায়, সেখানে Samsung Galaxy A15 আশা করছি একটা ভালো রেজাল্ট দিবে। এটার UI নিয়ে কোন কমপ্লেইন নেই। খুব স্মুথনেস আমরা এটা থেকে পেয়েছি।
প্রসেসর of Samsung Galaxy A15
ফোনটিতে প্রসেসর হিসেবে পেয়ে যাচ্ছেন MEDIATEK HELIO G99। বহুল পরিচিত এবং এরকম প্রাইস পয়েন্টে মুখস্থ একটা প্রসেসর। খুব কমন এবং স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে আমরা এটিকে ধরে নিতে পারি।
প্রসেসর |
DAY TO DAY টাস্কে এই ফোনটা একটুও গরম হচ্ছিল না। অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ফেসবুকিং, মাল্টি টাস্কিং ইত্যাদি কাজের সময় একটা ক্লিন পারফরম্যান্স আপনি Samsung Galaxy A15 থেকে পাবেন। তবে আপনার ফোনের RAM যদি 6GB বা 8GB ভ্যারিয়েন্টের হয় এখান থেকে খুব ভালো একটা RAM Management পাবেন। তবে 4GB ভ্যারিয়েন্টটিতে At a time অনেকগুলো অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনি একটু প্যারায় পড়বেন।
এই বিষয়টা একটু বুঝেশুনে আপনি কিনবেন যে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যবহার করার প্রয়োজন আপনার পড়ে কিনা অর্থাৎ আপনার যদি হেভি মাল্টি টাস্কিং এর প্রয়োজন পড়ে তাহলে 6GB ভ্যারিয়েন্ট বা 8GB ভ্যারিয়েন্টটি চুজ করতে পারেন।
তাছাড়া অ্যাপ ওপেন এবং ক্লোজ টাইমিংও ডিসেন্ট ছিল। প্রত্যেকবার রিফ্রেশ রেটও স্যামসাং এর ক্লেইম অনুযায়ী পেয়েছি।
Samsung Galaxy A15 কি গেমিংয়ের জন্য অপটিমাইজড?
Mediatek Helio G99 দিয়ে মোটামুটি রকম গেমিং করা যায় এটা আপনারা অনেকেই জানেন। তো এই ডিভাইস থেকে ওরকম একটা পারফরম্যান্স পেয়েছি। পাবজি একেবারে সুপার বা আশানুরূপ রেজাল্ট যে দিয়েছে তেমনটা বলব না। বাট সময় কাটার উপযোগী রেজাল্ট পাওয়া যায়।
গেমিং টেস্ট |
HD হাই ফ্রেম রেটে প্লে করে মোটামুটি খেলা যায়। তবে লোয়ার সেটিংসে নিয়ে খেললে আরেকটু স্মুথ রেজাল্ট পাবেন এবং লং রানে গিয়েও বেটার আউটপুট দিতে পারে।
ফ্রি ফায়ার লাভার যারা আছেন তাদের জন্য পাবজির তুলনায় সুখবর আছে। ফ্রি ফায়ার ডিভাইসটি পাবজির তুলনায় বেটার রেজাল্ট দিচ্ছিল এবং তুলনামূলকভাবে আরেকটু কম হিট জেনারেট করছিলো।
আবার এই ফোন খুব বেশি ব্যাটারিও বার্ন করে না। একটু গেমিং টাইপের।
তো এতসব ফ্যাক্টর বিবেচনায় আমার মনে হয় না ১৭০০০ টাকার এই ফোনকে আপনি খারাপ বলতে পারেন। তবে আমার মনে হয় এটার 8GB RAM ভ্যারিয়েন্টের ফোনটার দাম 23000 না হয়ে 20000 টাকার আশেপাশেই হলে ভালো হতো।
Samsung Galaxy A15 এর ক্যামেরা কেমন ?
এবার চলে আসি Samsung Galaxy A15 এর ক্যামেরা সেকশনে। মেইন ক্যামেরা 50MP এর, পরবর্তী 5MP এর আল্ট্রাওয়াইড শ্যুটার এবং 2MP এর ম্যাক্রো শ্যুটার। ভাই এটাও সোনার হরিণ কারণ এখানে 5MP এর আল্ট্রাওয়াইড শ্যুটার আছে। 13MP এর ফ্রন্ট ক্যামেরা।
এই যে 13MP এর ফ্রন্ট ক্যামেরা। এটা কিন্তু আমরা স্যামসাংয়ের আরো দামি ফোন A35-এ পেয়েছি। এবার ক্যামেরা পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলা যাক।
এর যে 50MP এর মেইন ক্যামেরা, পারফেক্ট আলোতে প্রোপার ব্রাইটনেসসহ ছবি তুলতে পারছিল। খুব কালারফুল এবং ভাইব্রেন্ট টাইপের ছবি এটা দিয়ে তোলা যাচ্ছিল।
আবার এর ডাইনামিক রেঞ্জের ছবিও আমরা এভারেজের তুলনায় বেটার পেয়েছি। ক্যামেরার শার্পনেস এবং ডিটেইলসও খারাপ না।
তবে শ্যাডো বা একটু ছায়াময় ছবিগুলো খুব একটা ভালো ছিল না। লো লাইটে Samsung Galaxy A15 এর ক্যামেরা পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো না। তবে নাইট মোড অন করে নিলে আরেকটু বেটার রেজাল্ট পাওয়া যায়।
তবে পোর্ট্রেইট মোডের ছবিগুলো ভালো ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ডে হেভি লাইট বা ক্রিটিক্যাল সিনারিও চলে না আসলে ভালো ছবি তুলে দিতে পারছিল।
তবে ফ্রন্ট ক্যামেরা কিন্তু ডিসেন্ট রেজাল্ট দিয়েছে আউটডোরে এবং ইনডোরে। Samsung Galaxy A15 এর ফ্রন্ট ক্যামেরা আসলেই খুব ভালো।
ভিডিও রেকর্ডিং
স্মার্টফোনটিতে ভিডিও রেকর্ডিং করা যায় সর্বোচ্চ 1030P/30FPS এ। 60FPS থাকলে ভালো হতো। না থাকলেও কিছু করার নেই। তবে ভিডিও আহামরি ভালো ছিল না। তবে যেহেতু স্যামসাং এর ফোন তাই কোয়ালিটি এভারেজের তুলনায় একটু উপরে থাকবে। তবে 60fps এ ভিডিও রেকর্ডিংটা আমি আশা করেছিলাম।
Samsung Galaxy A15 এর সাউন্ড কোয়ালিটি
Samsung Galaxy A15 এ সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সেলেশন মাইক ফিচারটা আছে। পাশাপাশি রয়েছে 3.5mm হেডফোন জ্যাক।
Mono soeaker আছে এরকম একটা ডিভাইসের সাথে আমরা অবশ্যই Stereo স্পিকারটা আশা করেছিলাম। দুইটা স্পিকার থাকলে খুব দারুণ হতো। তবে এর যে একটা স্পিকার, এটার যে সাউন্ড কোয়ালিটি খারাপ বা ফেটে যায় তেমনটা না। তবে Stereo এর মজা পাবেন না।
স্পিকার |
এ কারণে আপনার মনে হবে সাউন্ড কোয়ালিটিটা একটু ডাউন। অন্যদিকে এয়ারপিসের সাউন্ডটা আবার ঠিকই আছে। ভাইব্রেশন মটর বা এই জাতীয় সবকিছু ঠিকই আছে। নেটওয়ার্ক জনিত কোন সমস্যাই ফেস করতে হয় নি এই ফোনে। সবকিছু ভালোই চলছে।
এবার কথা বলা যাক এর লাস্ট অপশন ব্যাটারি নিয়ে।
Samsung Galaxy A15 এর ব্যাটারি
5000mAh এর ব্যাটারি এবং 25W এর চার্জিং সিস্টেম। যদিও চার্জারটা আপনাকে আলাদা কিনে নিতে হবে। বাসায় থাকলেতো ভালোই। হালকা পাতলা মাল্টি টাস্কিং করলে পুরো দিন চালিয়ে নিতে পারবেন। তবে গেমিং বা হেভি ইউজ করলে হয়তো দিনে আরেকবার চার্জ দিতে হতে পারে।
শেষকথা
ওভারঅল, চার্জার নেই এটা একটা কমতির জায়গা, ডিসপ্লেতে ওয়াটার ড্রপ আছে, ভেজেল একটু মোটা ইত্যাদি। তবে আমার মনে হয় এর কোনটাই সিরিয়াস ইস্যু না।
আরো দেখুন,
এর বাইরে স্মার্টফোনটির অন্য যে বিষয়গুলো আছে তা টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসার মতোই। আমি বলব ভাই আপনি যদি লং রানের জন্য ভালো একটা ফোন চান, একই সাথে ভালো UI, ভালো একটা মেইন ক্যামেরা যদি আপনার দরকার হয় তাহলে এই ফোনটাকে আপনি দেখতে পারেন।
রিভিউটা কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
Reviewed by: SamZone
0 Comments