ল্যাপটপ বাছাইয়ে দ্বিধা? আপনার বাজেটে সবচেয়ে ভালো ল্যাপটপ কিনুন ১৩ টি উপায়ে

আপনার বাজেট আছে, কিন্তু বাজারের এত এত ল্যাপটপের ভিড়ে কোন ল্যাপটপটা আপনার বাজেটে বেস্ট হবে সেটা চুজ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন ? বা কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ আপনার জন্য সেরা চয়েজ হবে সেটা নিয়ে দ্বিধায় আছেন?

ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়

চিন্তার কারণ নেই, এই আর্টিকেলে আপনার বাজেটে সবচেয়ে ভালো ল্যাপটপ কিভাবে বাছাই করবেন তার সম্পূর্ণ গাইডলাইন শেয়ার করব। ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল। তবে প্রথমেই একটা সামারি দিয়ে দিলে ভালো হয় আর্টিকেলটি সম্পর্কে।

সেরা ল্যাপটপ চেনার ১৩ টি উপায়-

  1. আগে প্রয়োজন বুঝা: ল্যাপটপ দরকার নাকি ডেস্কটপ
  2. কি কাজের জন্য ল্যাপটপ নিবেন তা নির্ধারণ করা
  3. বাজেটের দিকে দৃষ্টি দেওয়া
  4. ব্র্যান্ড প্রথমেই সিলেক্ট না করা
  5. Processor চুজ করা
  6. RAM কত GB নির্ধারণ করা
  7. ল্যাপটপের সাইজ নির্ধারণ
  8. গ্রাফিক্স কার্ড সিলেকশন
  9. SSD নির্ধারণ
  10. ল্যাপটপ পোর্টস 
  11. ডিসপ্লে সাইজ
  12. উইন্ডোজ প্রিইনস্টলড আছে কিনা
  13. ব্যাটারি ব্যাকআপ 

ল্যাপটপ কেনার বিষয়টি মাথায় আসার আগেই নিজেকে একটা প্রশ্ন করবেন, আপনার কি আসলেই ল্যাপটপ দরকার?

১. ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ?

প্রশ্নটা খুব সমান্য মনে হতে পারে আপনার কাছে। কিন্তু এটা আসলেই ম্যাটার করে। প্রথম কথা হলো, ল্যাপটপ আসলে কি? ল্যাপটপ হলো একটা পোর্টেবল মেশিন। যেটা নিয়ে আপনি ক্লাসে যেতে পারবেন, অফিসে যেতে পারবেন, নদীর পাড়ে, ছাদে ইত্যাদি জায়গায় বসে এটাকে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ সুপার ফোল্ডেবল। যেটা আপনি ডেস্কটপ নিয়ে পারবেন না। এটাই হলো ল্যাপটপ কম্পিউটার আর ডেস্কটপ কম্পিউটারের মধ্যে বেসিক পার্থক্য।

কিন্তু আপনি যেই টাকা দিয়ে ল্যাপটপ কিনবেন সেই টাকা দিয়ে যদি একটা পিসি বা ডেস্কটপ বিল্ট করেন, তাহলে ল্যাপটপের চেয়ে দ্বিগুণ পারফরম্যান্স পিসি থেকে পাবেন। সো এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন আপনার কি আদৌ ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ দরকার।

আপনি যদি হেভি কাজকর্ম করেন। অর্থাৎ আপনার পোর্টেবিলিটির দরকার নেই, পারফরম্যান্সটাই দরকার। Then go for Desktop। কিন্তু কম্পিউটার নিয়ে যদি আপনার অফিস, বাসা, নদীর পাড় ইত্যাদিতে ঘুরাঘুরির প্রয়োজন পড়ে তাহলেতো আপনার ল্যাপটপই দরকার।

নদীর পাড়ে ল্যাপটপ ব্যবহার

এতক্ষণে মনে হয় প্রথম প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন যে আসলে আপনার ডেক্সটপ দরকার নাকি ল্যাপটপ।

এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নে।

২. আপনি কি কি কাজের জন্য ল্যাপটপ নিবেন?

ওয়েল, কেউ আছে এটাকে অফিসের কাজে ব্যবহার করে। কেউ অ্যাসাইনমেন্টের জন্য ব্যবহার করে। কেউ আবার ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক কাজগুলো করে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের ভিত্তিতেও আবার ল্যাপটপের ভিন্নতা আছে। ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের জন্য এক টাইপের ল্যাপটপ দরকার। আবার ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য এক প্রকার ল্যাপটপের দরকার। গেমিং করতে চাইলে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ল্যাপটপ দরকার।

আবার অনেকেই আছে অফিসের কাজও করবে, একইসাথে গেমিংও করবে। এভাবে মাল্টি পারপাসে যদি আপনি ল্যাপটপ নিতে চান তাহলে কোন কাজটা আপনার জন্য বেশি দরকার সেটাকে ফোকাসে রেখেই ল্যাপটপ বাছাই করবেন।

এবার তৃতীয় প্রশ্নটা হলো আপনার বাজেটের।

৩. আপনার বাজেট কত?

অনেকেই বলে, ভাই আমার বাজেট তো আছে। টাকা পয়সা সমস্যা না। কিন্তু আমি যে কাজটা করব তার জন্য কত বাজেটের ল্যাপটপ কিনলে ভালো হয়। সো, আমি আপনাদের একটা জেনারেল আইডিয়া দিয়ে দেই। এমনই হতে হবে বলে কথা নেই। ইন জেনারেল একটা আইডিয়া।

ধরা যাক, আপনি অফিসের কাজ করবেন, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করবেন, MS Office, ওয়ার্ড, এক্সেল ইত্যাদি করবেন। এর বাইরে ইউটিউবে ভিডিও দেখা, নাটক, মুভি দেখা ইত্যাদি করবেন। এর বাইরে তেমন কিছু করবেন না। তাহলে আপনার বাজেট ৫০,০০০ এর নিচে হলেই চলবে। অর্থাৎ ৩০০০০ - ৫০০০০ টাকার মধ্যে বাজেট হলেই হবে।

আপনি যদি এর সাথে ফটোশপ ইউজ করবেন, টুকটাক ছবি এডিট করবেন তাহলে আপনার বাজেট ৫০০০০ - ৬০০০০ হাজার হতে হবে।

আপনি যদি এসবের সাথে আবার ভিডিও এডিটিংও করতে চান, ধরলাম খুবই বেসিক ভিডিও এডিটিং। আপনার বাজেট ৮০০০০ এর কাছাকাছি হলে চালিয়ে নিতে পারবেন।

কিন্তু আপনি যদি গেমিং করতে চান তাহলে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় আপনাকে বাজেট সেট আপ করতে হবে। অর্থাৎ বাজেট এক লাখ টাকার ওপরে রাখতে হবে। এক লাখের নিচে আপনি ভালো গেমিং পারফরম্যান্স দিতে পারে এমন ল্যাপটপ পাবেন না।

আমি এখানে আবারো রিকমেন্ড করব আপনি যদি গ্যামিংই করতে চান তাহলে এক লাখ টাকা দিয়ে একটা পিসি বানান, অন্তত ল্যাপটপ থেকে তিন চারগুণ বেটার পারফরম্যান্স পাবেন।

এই ছিলো বাজেট আইডিয়া। এটা যদি আপনি মাথায় রাখেন তাহলে আপনার ল্যাপটপ বাজেটটা ফিক্সড করে ফেলতে পারবেন।

এবার পরবর্তী তথা আমার মতে সবচেয়ে ট্রিকি প্রশ্ন হলো ব্র্যান্ডিং।

৪. কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ নিব?

এই ব্র্যান্ড নিয়ে নানান ধরনের কনফিউশন বা Rumors মার্কেটে থাকে। ধরেন আপনার এক বন্ধু একটা ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ব্যবহার করে আসছছ অনেক দিন থেকে। সে হয়তো আপনাকে ঐ ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ইউজ করার জন্য সাজেস্ট করবে। কিন্তু সে জানেনা অন্যান্য ব্র্যান্ডের ল্যাপটপও এটার চেয়ে বেটার পারফর্ম করে।

ব্র্যান্ড নিয়ে যে কনফিউশনটা বাংলাদেশি ল্যাপটপ ইউজারদের মধ্যে তৈরি হয়, আমার মনে হয় সেটার একদমই দরকার নেই। কারণ বাংলাদেশে যে কয়টা ব্র্যান্ড এভেইলেবল আছে সবারই বাংলাদেশে ঢুকার পর একই অবস্থা হয়ে যায়। আফটার সেল সার্ভিস বা অন্যান্য যেসব বিষয়গুলো আছে সবগুলোই সব ব্রান্ডেরই কাছাকাছি। তাই আমার মনে হয় ব্র্যান্ড নিয়ে এত চুলছেড়ার দরকার নেই।

কিন্তু পারটিকুলারলি একটা ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ আছে যেটা কিনতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়ার দরকার নেই। নির্দিদ্ধায় কিনে নিতে পারেন, সেটা হলো Apple। আপনার যদি বাজেট এক লাখ টাকার উপরে হয় আপনি অ্যাপলের একটা ল্যাপটপ কিনেন। 

কফিশপে অ্যাপল ম্যাকবুক ব্যবহার

খুব ভালো পারফরম্যান্স পাবেন। স্পেশালি Apple M1, Apple M1 pro ইত্যাদি যদি এফোর্ড করতে পারেন তাহলেতো খুবই ভালো।

যদি এক লাখ টাকার আশেপাশে আপনার বাজেট হয় তবে Apple এর M1 সিরিজের যে ল্যাপটপগুলো আছে সেগুলো কিনেন। পারফরম্যান্স একদম আপ টু দ্যা মার্ক।

আপাতত অ্যাপল সাইডে রাখি। কারণ অ্যাপল যারা কিনবে তাদের এই আর্টিকেলটা আসলে পড়ারই দরকার নেই। কারণ অ্যাপল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপগুলো ওভার পারফর্মিং প্রত্যেকটা সেগমেন্টেই।

কিন্তু অন্যান্য যে ব্র্যান্ডগুলো আছে অর্থাৎ A ক্যাটাগরির ব্র্যান্ড। যেমন

✓ hp

✓ Asus

✓ DELL

✓ msi

✓ Lenovo

✓ Acer

সকল A ক্যাটাগরির ল্যাপটপ ব্যান্ড

এসব হলো মোস্টলি ফেমাস ব্র্যান্ড মিড বাজেটের মধ্যে। কোনটির চেয়ে কোনটি কম না। সবগুলোর পারফরম্যান্স মোটামুটি একই।

তবে খুব কম দামি ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে Chuwi, corebook ইত্যাদি। যেগুলো আপনি 30000 টাকা বাজেট রেঞ্জে পেয়ে যাবেন। তবে দাম যেমন পারফরম্যান্সও তেমন। আপনি যদি কম দামি ল্যাপটপ খুঁজেন তাহলে এসব মোটামুটি cheap ব্র্যান্ডের ল্যাপটপগুলো নিতে পারেন।

যদি আপনি নিজের জন্য সবথেকে ভালো ল্যাপটপ চান তাহলে A ক্যাটাগরির ল্যাপটপগুলো থেকে যেকোন একটা ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ চুজ করতে পারেন। তবে আমার রিকমেন্ডেশন থাকবে আগে ব্র্যান্ড সিলেক্ট করে তারপর মডেল চুজ করতে যাবেন না।

আপনার টার্গেট থাকবে ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আপনার বাজেটের ভিতর বেস্ট স্পেসিফিকেশন ওয়ালা ল্যাপটপ কোনটি সেটা চুজ করা। 'আমাকে ঐ ব্র্যান্ডের ল্যাপটপই নিতে হবে' এমন টার্গেট রাখা যাবে না, যদি না সেটা Apple হয়।

আশা করি ব্র্যান্ড নিয়ে আপনাদের কনফিউশন দূর হয়ে গিয়েছে। এবার আসি কম্পিউটারের প্রাণভোমরা প্রসেসরের বেলায়।

৫. কোন Processor এর ল্যাপটপ চুজ করব?

প্রসেসরের বিষয়টি নির্ভর করে দুইটি বিষয়ের ওপর

  • আপনার বাজেটের ওপর
  • কোন কাজের জন্য ল্যাপটপ নিচ্ছেন তার ওপর

আপনি যদি একটু হেভি কাজ করেন লাইক গ্রাফিক্স ডিজাইন, হালকা পাতলা ভিডিও এডিটিং এবং একটু বেশি মাল্টিটাস্কিং করবেন, তাহলে আপনি যত বেটার প্রসেসর নিতে পারবেন ততই ভালো। আবার বাজেটেও আপনাকে সাপোর্ট দিতে হবে। তাই এই দুইটা জিনিসই আপনাকে ব্যালেন্সে রাখতে হবে।

ওকে, প্রসেসর দুইটি ব্র্যান্ডের আছে, Intel এবং AMD। বর্তমান সময়ে এসে আপনি যদি বলেন কোন প্রসেসরের ল্যাপটপ নিলে ভালো হবে। তাহলে আমি সাজেস্ট করব Intel। বাট AMD এরও অনেক ল্যাপটপ আছে যেগুলো খুবই ভালো। কিন্তু এখানে একটা জেনারেল নিয়ম আছে।

সবসময় চাইবেন লেটেস্ট জেনারেশনের প্রসেসর চুজ করতে। যেমন Intel এর বেলায় Intel 14th generation প্রসেসর চলছে বর্তমানে। সবসময় চাইবেন Intel 14th generation প্রসেসরের ল্যাপটপ নিতে। কিন্তু তারমানে এই না যে এর আগেরগুলো নেওয়া যাবে না।

AMD প্রসেসর এবং Intel প্রসেসর
AMD প্রসেসর এবং Intel প্রসেসর 

Intel এর বেলায় যদি ধরি, কারেন্টলি 14th generation চলছে। মোটামুটি আপনি Intel 11th generation প্রসেসরের ল্যাপটপ পর্যন্ত নিতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় না এর নিচে যাওয়া উচিত হবে। অর্থাৎ 10th জেনারেশন। আরো বিস্তারিত ধারণা পেতে আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।

আপনি যদি 14th জেনারেশনের প্রসেসর না পান তাহলে যাবেন 13th এ। যদি 13th না পান তাহলে যাবেন 12th এ। যদি তাও না পান তাহলে 11th জেনারেশনের ল্যাপটপ নিবেন। কিন্তু আমার মনে হয় না এর আরো নিচে যাওয়া খুব একটা লজিক্যাল হবে।

কিন্তু AMD-র বেলায় একদম কারেন্ট জেনারেশনের প্রসেসরের ল্যাপটপ নিতে চেষ্টা করবেন। কারেন্ট জেনারেশন ছাড়া আর একধাপও পেছনে যাবেন না। সর্বোচ্চ এক ধাপ পেছনে গেলে যেতে পারেন। কিন্তু সেটাও রিকমেন্ডেড থাকবে না।

কারণ হলো Intel ল্যাপটপের বেলায় একটু বেশিই এক্সপেরিয়েন্সড AMD-এর তুলনায়। কিন্তু সবসময় আমার রিকমেন্ডেশন থাকবে Intel প্রসেসরের ল্যাপটপ কেনার জন্য।

এখন কথা হলো Intel প্রসেসরের ল্যাপটপই যদি নেন। তাহলে কোনটা পছন্দ করবেন। i3, i5, i7 নাকি i9। এটাও ডিপেন্ড করে আপনার বাজেট এবং আপনি কি কাজ করবেন সেটার ওপর। আপনি যদি খুবই হালকা টাইপের কাজ যেমন MS Office, internet browsing, YouTube video ইত্যাদি করেন এবং বাজেট যদি 50000 টাকার নিচে হয় তাহলে লেটেস্ট ইনটেল প্রসেসরের core i3 ল্যাপটপ নেন।

কিন্তু শুধুমাত্র প্রসেসর দিয়েই ল্যাপটপের প্রাইস নির্ধারণ করা হয় না। ল্যাপটপের দাম আরো যেসব ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে -

✓ RAM কত জিবি থাকবে

✓ SSD আছে কিনা

✓ এক্সটার্নাল গ্রাফিক্স কার্ড আছে কিনা

✓ পোর্টস কি কি আছে

✓ ল্যাপটপের ডিসপ্লে সাইজ কত

ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ল্যাপটপের দাম নির্ধারণ হয়। এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, 50000 টাকায় i3 ল্যাপটপ নিব? Trust me, শুধুমাত্র প্রসেসরের ওপর ল্যাপটপের পারফরমেন্স নির্ভর করে না। একটা ব্যালেন্স থাকতে হয়। তাই 50000 টাকা বাজেট থাকলে i3 লেটেস্ট জেনারেশন প্রসেসরের ল্যাপটপটাই নিন।

আর যদি বাজেট 60 হাজার বা তার ওপরে হয় তাহলে i5 খুঁজতে পারেন। যদি 70 বা 80 হাজারের ওপরে বাজেট হয় তাহলে i7 এর দিকে ঝুঁকতে পারেন। বাজেট অনেক বেশি হলে i9 এর ল্যাপটপ নিতে পারেন।

এখানে একটা ওয়ার্নিং দিয়ে দিই আপনাদের। প্রথম থেকেই এভাবে স্টেপ বাই স্টেপ ডিসিশন নির্দিষ্ট করে ল্যাপটপ কেনার অর্থ এই নয় যে, আপনি আগের ডিসিশন গুলো পরিবর্তন করতে পারবেন না। যেমন আপনি প্রসেসর অতটা ভালো পেলেন না কিন্তু RAM ভালো পেলেন। তাহলে কাজের প্রয়োজনে এটাকে নিতে হবে। 

আবার ল্যাপটপের স্টোরেজ খুবই ভালো এবং হার্ডড্রাইভও অনেক আছে, কিন্তু RAM অতটা নয়। গেমিং কেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা না থাকলে আপনার এটাকে কাজের প্রয়োজনে নিতে হবে। এ ধরনের বিভিন্ন ফ্যাক্ট বিবেচনায় আপনাকে ডিসিশন পরিবর্তন করতে হতে পারে।

নেক্সট যে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে তা হলো RAM

৬. RAM কত GB নিবেন?

RAM এর বিষয়ে একটা কড়া নিয়ম বলে দিই। আপনার বাজেট যতই কম হোক 4GB এর নিচে নামবেন না কখনো। 4GB হলো মিনিমাম রিকোয়্যারম্যান্ট। এখনকার ল্যাপটপ 4GB ছাড়া হয়ই না আসলে। 4GB-র নিচে নামলে ল্যাপটপ পারফরম্যান্স ঠিক থাকবে না।

ল্যাপটপের DDR4 RAM

সবসময় রিকমেন্ডেড থাকবে, 'Go for 8GB RAM'। দেখুন, 8GB RAM ওয়ালা ল্যাপটপ নিতে বলার কারণ হলো বর্তমান যুগ। বর্তমানের সফটওয়্যার গুলো অনেক বেশি আধুনিক। অনেক বেশি পাওয়ার কনজিউম করে এগুলো। এসব সফটওয়্যারের পেছনে অনেক নেক্সট জেনারেশনের কোডিং কাজ করে।

যেমন ফটোশপের কথাই যদি ধরেন, আগের ফটোশপ ভার্সনগুলো ছিল হালকা। এগুলো দিয়ে তেমন কোন হাই লেভেল ফটো এডিটিং করা যেত না। কিন্তু এখনের কথা চিন্তা করেন। আজকাল গ্রাফিক্সের এমন কোন কাজ নেই যা ফটোশপ দিয়ে করা যাচ্ছে না। 

সে কারণে এখনকার ফটোশপ ভার্সন অনেক বেশি স্টোরেজ চায় এবং অনেক আপগ্রেডেড। এসব আপগ্রেডেড সফটওয়্যার গুলোকে চালানোর জন্য একটু বেশি RAM এর প্রয়োজন হয়। তাই 8GB এর নিচের RAM এর ল্যাপটপ নিলে তেমন স্মুথ পারফরম্যান্স আশা করতে পারেন না।

আর যদি 8GB এর উপরে যেতে পারেন আর আপনার বাজেটে যদি কুলায়, দ্যাটস ফাইন।

আবার RAM এর মধ্যেও ভিন্নতা আছে। দুই ধরনের RAM আছে, একটি DDR এবং অন্যটি LPDDR। DDR সিরিজের রেমগুলো পাওয়ারফুল। LPDDR সিরিজের রেমগুলো একটু লেস পাওয়ারফুল। এগুলো সাধারণত মোবাইলে ইউজ করা হয়। সবসময় DDR সিরিজের RAM এর ল্যাপটপ কিনতে রিকমেন্ডেশন থাকবে। তবে আপনি যদি ব্যাটারি ব্যাকআপ একটু বেশি চান তাহলে LPDDR সিরিজের RAM-এর ল্যাপটপ কিনতে পারেন।

এরপরে চলে আসি ল্যাপটপের সাইজে।

৭. কত ইঞ্চির ল্যাপটপ আপনি নিবেন?

13inch থেকে শুরু করে 17inch বা 19inch পর্যন্ত ল্যাপটপ আছে। সাইজের কথা যদি বলি, আপনি যদি মাল্টিমিডিয়া এনজয় করতে চান যেমন কোন এক্সাইটিং ভিডিও বা মুভি ইত্যাদি তাহলে আপনার একটু প্রশস্ত ডিসপ্লের ল্যাপটপ দরকার।

আর যদি মনে করেন, না। আমার মাল্টিমিডিয়া এনজয় করার দরকার নেই। আমি শুধু অফিসিয়াল কাজকর্মের জন্যই ল্যাপটপ নিচ্ছি তাহলে আপনি ছোট ডিসপ্লের ল্যাপটপ নিলেই চলবে।

তবে এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার, যাদের অফিসের কাজ একটু বেশি অর্থাৎ ওয়ার্ড প্রসেসিং বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি ধরনের কাজ যাদের বেশিই করা লাগে তারা Vertical Ratio (ডিসপ্লে উপর নিচে বড়) এর ল্যাপটপ নিলে ভালো হয়। এই ভার্টিক্যালি লম্বা ল্যাপটপগুলো যদি আপনি চুজ করেন তাহলে উপর নিচে স্পেস বেশি পাবেন।

ধরা যাক, আপনি নিউজপেপারের নিউজ পড়ছেন‌ বা ওয়ার্ডে লেখালেখির কাজ করছেন। উপরে নিচে স্পেস যদি বেশি থাকে তাহলে অনেক বেশি কনটেন্ট আপনি একসাথে দেখতে বা লিখতে পারবেন। অন্যদিকে, আপনার ল্যাপটপ যদি সাইডে লম্বা হয় তাহলে লাইন হয়তো লম্বা হবে কিন্তু উপর নিচে খুব বেশি কনটেন্ট আপনি দেখতে পারবেন না।

সো, ডিসপ্লের বেলায় ভার্টিক্যাল রেজুলেশনের ডিসপ্লে এর ল্যাপটপগুলো আপনারা চুজ করতে পারেন।

এবার চলে আসি গ্রাফিক্সের বেলায়।

৮. কোন গ্রাফিক্স কার্ড আপনি নিবেন?

দুই ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার হয় ল্যাপটপে, dedicated graphics card এবং Integrated graphics card।

গ্রাফিক্স কার্ড
গ্রাফিক্স কার্ড 

ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড হলো যেটা প্রসেসরের মধ্যেই থাকে। এখন প্রশ্ন হলো ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড আপনার কখন প্রয়োজন হবে? খুব ভারী কাজ যেমন ভিডিও এডিটিং, রেন্ডারিং, কিংবা হাই রেজুলেশন গেম প্লে করবেন। 

তখন আপনার ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন পড়বে। যদি সেটা না করেন তাহলে আমার মনে হয় না ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন পড়বে।

কারণ ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডওয়ালা ল্যাপটপগুলোর দাম অনেক বেশি হয়। তবে আপনার কাজের ওপর ভিত্তি করে গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন আছে কিনা তা।

এর পরেই চলে আসে SSD।

৯. SSD কি লাগবেই?

যেকোন কম্পিউটারের জন্য SSD অনেক বেশি ইম্পোর্টেন্ট। ল্যাপটপে যদি SSD না থাকে তাহলে ভালো পারফরম্যান্স আপনি পাবেন না। অনেকে বলতে পারেন, 'আরে ভাই, এই ল্যাপটপে তো 256 জিবি SSD আছে।আমার আরো বেশি স্টোরেজ দরকার।' যদি আরো এক্সটার্নাল স্টোরেজ দরকার হয় তাহলে আপনি HDD (Hard Disc Drive) লাগাতে পারেন।

কিন্তু যে ল্যাপটপে‌ শুধু Hard Disc লাগানো আছে কিন্তু SSD নাই সে ল্যাপটপ আপনি নিবেন না। তবে SSD নেই কিন্তু SSD লাগানোর Slot আছে। সেরকম ল্যাপটপ চাইলেও আপনি নিতে পারেন। পরে SSD লাগিয়ে নিতে পারবেন।

ধরেন ল্যাপটপে 512GB হার্ডডিস্ক আছে, পাশাপাশি SSD লাগানোরও একটা স্লট আছে। তাহলে আপনি যেদিন ল্যাপটপ কিনবেন সেদিনই SSD লাগিয়ে নিবেন। যদি বাজেটে শর্টেজ থাকে তাহলে এক মাস দুই মাস পরেও লাগিয়ে নিতে পারেন।

কিন্তু ট্রাস্ট মি, SSD লাগানোর আগ পর্যন্ত আপনি যত ভালো বাজেটেরই ল্যাপটপ কিনেন না কেন, আপ টু দ্যা মার্ক পারফরম্যান্স আপনি পাবেন না। কারণ Hard Disc এখন legacy technology হয়ে যাচ্ছে, এর পারফরম্যান্সও SSD-র তুলনায় অনেক স্লো। তাই SSD ছাড়া ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না।

SATA এবং NVMe SSD

SSD এরও ভ্যারিয়েন্ট আছে। SATA এবং NVMe। যদি NVMe SSD হয়, খুবই ভালো। SATA-ও ফাইন। তবে SATA থেকে NVMe অনেক ফাস্ট। যদি NVMe SSD হয় তাহলে দেখবেন দামও অনেক বেশি হবে সেই ল্যাপটপের।

১০. ল্যাপটপের Port selection 

আজকাল অনেক ল্যাপটপ দেখবেন অনেক বেশি স্লিম হয়। এ ধরনের slim ল্যাপটপগুলোতে পোর্টসের পরিমাণও কম হয়। শুধুমাত্র দুই তিনটা USB-C পোর্ট দিয়ে দেয়। কোনটাতে থান্ডারবোল্ট থাকে, কোনটাতে থাকে না। থান্ডারবোল্ট পোর্ট এর ল্যাপটপ যদি আপনার দরকার না হয় তাহলে ঐদিকে যাবেন না। আগে বুঝবেন থান্ডারবোল্ট কি এবং কি কাজে ব্যবহার করা হয়।

পাশাপাশি USB type-A অর্থাৎ ফুল সাইজ USB যেগুলো সেগুলো আছে কিনা দেখবেন ল্যাপটপে। অনেকের এটা দরকার হয় আবার অনেকের হয় না। অর্থাৎ আপনার চাহিদা অনুযায়ী চিন্তা করবেন।

আপনার যদি কার্ড রিডারের দরকার হয়, তাহলে দেখেন কোন ল্যাপটপে কার্ড রিডারের পোর্ট আছে। এভাবে পোর্টসগুলো আপনি সিলেকশন করেন।

ল্যাপটপ পোর্টস

পাশাপাশি আপনার ল্যাপটপ স্লিম হবে নাকি একটু মোটা হবে সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আপনার ল্যাপটপ যদি স্লিম হয় বুঝে নিবেন এটার থার্মাল পারফরম্যান্স তুলনামূলক খারাপ হবে। আবার এরকম না যে স্লিম মানেই খারাপ, Thick বা মোটা মানেই ভালো। অনেক থিক ল্যাপটপ আছে যেগুলোর থার্মাল পারফরম্যান্স ভালো হয় না। 

কিন্তু জেনারেল রুলস হলো ল্যাপটপ যতো স্লিম হবে তার থার্মাল পারফরম্যান্স তুলনামূলক কম হবে। সাধারণত গেমিং ল্যাপটপ গুলা অনেক Bulky এবং মোটা হয়। গেমিং ফোকাস করে যদি ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে পোর্টেবিলিটির কথা ভাথা থেকে বাদ দিতে হবে।

স্লিম ল্যাপটপের বেলায় এটা মনে রাখতে হবে, দেখতে গুড লুকিং হবে, প্রিমিয়াম হবে, elegant হবে। কিন্তু আপনাকে অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হবে। মার্কেটে দেখবেন অনেক প্রিমিয়াম ল্যাপটপ 1.5 লাখ বা 2 লাখ টাকা দাম, অনেক স্লিম। কিন্তু এদের পারফরম্যান্স 50 হাজার টাকার ল্যাপটপের সাথে তুলনা করা যায়।

এর কারণ হলো এই ল্যাপটপগুলোকে স্লিম বানাতে গিয়ে অনেক ডিজাইন করতে হয়েছে, অনেক কিছুর জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করতে হয়েছে যাতে ল্যাপটপের সাথে এডজাস্ট হয়। এসব করে ল্যাপটপকে প্রিমিয়াম লুক দিতে গিয়ে দামটা অনেক বেড়ে যায়‌।

আমি রিকমেন্ড করব না প্রিমিয়াম ল্যাপটপ কিনতে, যদি না আপনার অনেক বেশি টাকা থাকে। শুধু পারফরম্যান্স অরিয়েন্টেড ল্যাপটপগুলো যদি কিনতে চান তাহলে প্রিমিয়াম সেগমেন্টের ল্যাপটপ কেনা থেকে বিরত থাকবেন ‌

বাট আপনি যদি কোনো কোম্পানির CEO, এম.ডি বা অনেক বড় বিজনেসমেন হয়ে থাকেন। আপনার প্রিমিয়াম লুকটাই মুখ্য তাহলে ঐদিকে যেতে পারেন। যেমন Dell এর XPS series এর ল্যাপটপ আছে, তারপর Acer এর Swift সিরিজের ল্যাপটপ অনেক বেশি স্লিম এবং প্রিমিয়াম।

১১. অন্যান্য বিষয়গুলো 

এবার চলে আসি আরো কিছু এক্সট্রা বিষয়ের দিকে যেগুলোর প্রতি আপনার নজর দিতে হবে।

উইন্ডোজ ইনস্টলড আছে কিনা 

প্রথমত, অনেক ল্যাপটপ দেখবেন যেগুলোতে উইন্ডোজ প্রি-ইনস্টলড আসে না বা রেজিস্টার্ড আসে না। এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন ল্যাপটপে যেন জেনুইন উইন্ডোজ ইনস্টল করা থাকে। আপনার কিনতে যাওয়া ল্যাপটপটিতে যদি উইন্ডোজ প্রি ইনস্টলড করা থাকে সেটা অনেক বড় প্লাস পয়েন্ট। অনেক প্যারা থেকে বেঁচে যাবেন।

আজকাল উইন্ডোজ ক্র্যাকিং, পাইরেসি ইত্যাদি নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই চেষ্টা করবেন সবসময় জেনুইন উইন্ডোজ ইনস্টলড ল্যাপটপ নিতে। কারণ ল্যাপটপ কিনে উইন্ডোজ সেটআপ দেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ।

ডিসপ্লে কোন টাইপের নিবেন

সবসময় চেষ্টা করবেন IPS বা IPS লেভেলের ডিসপ্লে নিতে। অনেক ল্যাপটপ আছে যেগুলো TN প্যানেল ইউজ করে। সেগুলোতে ভিউ এঙ্গেল তেমন ভালো হয় না। সে কারণে আমি রিকমেন্ড করব IPS প্যানেলের ডিসপ্লে এর ল্যাপটপ নিতে। আর যদি OLED প্যানেল পান তাহলেতো কথাই নেই।

ব্যাটারি ব্যাকআপ 

দেখুন, দুনিয়ায় একদম সবকিছু পারফেক্ট‌ পাওয়া পসিবল না। আপনি যদি ব্যাটারি ব্যাকআপ খুব ভালো চান তাহলে আপনাকে পারফরম্যান্স সেক্টরে একটু স্যাক্রিফাইস করতে হবে, যদি না বাজেট বাড়াতে না পারেন।

আবার RAM যদি ভালো চান দেখা যাবে ব্যাটারিতে একটু স্যাক্রিফাইস করতে হচ্ছে। অর্থাৎ একটু কম ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। আবার ডিসপ্লে, রেম, হার্ডড্রাইভ, SSD, ব্যাটারি ব্যাকআপ সবকিছুই যদি ভালো চান তাহলে প্রসেসরে একটু স্যাক্রিফাইস করতে হবে, যদি না আপনি বাজেট বাড়াতে না পারেন।

দেখবেন, প্রত্যেকটা ল্যাপটপের স্পেসিফিকেশনে লেখা থাকে যে এত থেকে এত ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যাবে। সেখান থেকে 2 থেকে 3 ঘন্টা কমিয়ে ধরবেন। কারণ কিছু ল্যাপটপ আছে ব্র্যান্ডিং করে যে 10 ঘন্টা 12 ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যাবে। সেখান থেকে 4-5 ঘন্টা কমিয়ে ধরলে একচুয়াল ব্যাটারি ব্যাকআপ বের হবে।

আরো দেখুন,

কিন্তু এই রুলটা সব ল্যাপটপের বেলায় না, যেমন Apple। ওরা যেটা প্রমিস করে সেটাই করে দেখায়। Apple যদি বলে তাদের কোন মডেলের ল্যাপটপে 10 ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। তাহলে আপনি একচুয়াল 10 ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপই পাবেন। They are really genius।

আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনার বাজেটে সেরা ল্যাপটপ কেনার উপায়গুলো জানতে পেরেছেন। ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কোন বিষয় নিয়ে জানার থাকলে কমেন্টে জানান।

Post a Comment

0 Comments