বাংলাদেশের বাজারে VIVO Y28 লঞ্চ হয় ৪ জুলাই ২০২৪ এ। VIVO Y28 এর দুইটি ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশের বাজারে আসে, যার একটি 6/128GB ভ্যারিয়েন্টের এবং অন্যটি 8/256GB ভ্যারিয়েন্টের।
VIVO Y28 এর 6/128GB ভ্যারিয়েন্টের প্রাইস ইন বাংলাদেশ 20,999 টাকা।
VIVO Y28 এর 8/256GB ভ্যারিয়েন্টের প্রাইস ইন বাংলাদেশ 25,999 টাকা।
তবে আমার মনে হয় শুধু দাম জেনেই আপনার VIVO Y28 কিনে নেওয়া উচিত হবে না। আপনার এর স্পেসিফিকেশন সম্পূর্ণ জানা দরকার। এই রিভিউ আর্টিকেলে VIVO Y28 কিনলে আপনি ঠকবেন নাকি লাভবান হবেন সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবেন। তাই ধৈর্য্যের সাথে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ রইল।
ছবিটিতে আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন VIVO Y28, অনেকটা পিঙ্ক কালারের মতো দেখতে। কিন্তু VIVO বলছে এটাকে গ্লিমিং অরেঞ্জ কালার। যদিও এটার আরেকটা গ্রিন কালারের ভ্যারিয়েন্ট আছে। কারও যদি এই কালারটা পছন্দ না হয় তাহলে গ্রিন কালারটাও চুজ করতে পারেন।
VIVO Y28 এর দুইটি ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে আসলে কোনটা নিলে আপনার জন্য ভালো হবে, বা ভ্যালু ফর মানি হবে কিনা। আদৌ কি VIVO Y28 নেওয়া আপনার জন্য ঠিক হবে কিনা তার সম্পূর্ণ ডিটেইলস থাকবে এই আর্টিকেলে।
তাহলে প্রথমেই শুরু করি এর ডিজাইন দিয়ে।
VIVO Y28 ডিজাইন
বিল্ড কোয়ালিটিতে VIVO Y28 খুব একটা কমতি রাখে নি। এটার সলিড বিল্ট কোয়ালিটি আপনাকে ইমপ্রেস করবেই। এর গ্লসি ফিনিশ, সাইডের রেলিং, অর্থাৎ হাতে নেওয়ার পর ফিলিংসটা খুবই ভালো। 6000mAh এর ব্যাটারি থাকার পরেও এর ওজন 199গ্রাম। (উপরের ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন)
এক্ষেত্রে ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশনটা VIVO ঠিকঠাকভাবেই করতে পেরেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে ইউজ করতে গেলেও কোন ধরনের আনকমফোর্টেবল ফিল আপনি পাবেন না।
সব চেয়ে মজার তথা ইম্প্রেসিভ বিষয় হলো ফোনটিতে IP64 রেটিং আছে। সো কিছুটা Dust এবং splash (পানির ছিটা) প্রতিরোধী।
সর্বোপরি বলতে হচ্ছে প্রাইস অনুযায়ী VIVO Y28 এর ডিজাইন তথা বিল্ট কোয়ালিটি একদমই পারফেক্ট।
VIVO Y28 এর ডিসপ্লে
এই জায়গাটিতে একটা বড়সড় কমতি লক্ষ করা গিয়েছে, সেটা হলো এর ডিসপ্লে রেজুলেশন। VIVO Y28 এর ডিসপ্লে রেজুলেশন 720P এর অর্থাৎ HD+। কিন্তু এই বাজেটের ফোনে Full HD+ ডিসপ্লে দেওয়া জরুরি ছিল।
তবে ভালো দিক হলো এখানে 90Hz রিফ্রেশ রেট আছে। আবার ডিসপ্লেতে 1000nits Peak brightness পাওয়া যাবে অর্থাৎ সানলাইটে গেলে খুব ভালো ভিজিবিলিটি পাবেন।
VIVO Y28 এর ডিসপ্লের কালার রিপ্রোডাকশনও ঠিকঠাক ছিল। ডিসপ্লেতে ফ্রন্ট ক্যামেরার কাট আউটটাও বেশ ছোট। কিন্তু খুব কাছে থেকে যদি আপনি কিছু দেখতে চান তাহলে রেজুলেশনের ঘাটতিটা আপনার চোখে পড়বে। তাছাড়া কোন ধরনের ভিউ এঙ্গেল রিলেটেড প্রবলেম নেই।
VIVO Y28 স্পিকার
Stereo স্পিকার দেওয়া হয়েছে। খুবই ভালো স্পিকার। খুব লাউড সাউন্ড প্রডিউস করে। ফোনের নিচের দিকে সাউন্ড গ্রিল আছে, উপরের দিকে এয়ারপিস। মোটামুটি মাল্টিমিডিয়া এক্সপেরিয়েন্স আপনাকে ভালো দিবে সাউন্ড এর বেলায়।
VIVO Y28 সেন্সর
VIVO Y28 এর ডানপাশে পাওয়ার বাটনের উপরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার আছে। যেটা খুব ফাস্ট এবং স্মুথলি কাজ করছিল।
তাছাড়াও বাম পাশে ইন্টার্নাল স্টোরেজ এক্সপানশনের অপশন পেয়ে যাবেন অর্থাৎ microSD card ব্যবহার করে স্টোরেজ 1TB এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারেন। সেই সাথে থাকছে একটি SIM card slot।
এর বাইরে usual পোর্টস এবং বাটনগুলো আছে অন্যান্য স্মার্টফোনে যেসব থাকে। তবে সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সেলেশন কোন মাইক্রোফোন দেওয়া হয় নি।
এবার এর পারফরম্যান্স নিয়ে কিছু বলা যাক।
VIVO Y28 পারফরম্যান্স
প্রথমত চলে আসি এর স্টোরেজের বেলায়। স্টোরেজের দিক থেকে কোন অভিযোগ আমার নেই। দুইটি ভ্যারিয়েন্টেই 128GB এবং 256GB স্টোরেজ আছে যেটা খুব বড়সড় একটা স্টোরেজ। চাইলে হিউজ এমাউন্ট অব ফাইলস অডিও, ভিডিও এটাতে স্টোর করতে পারেন।
VIVO Y28 এর প্রসেসর
VIVO Y28 কে রান করছে Media Tek Helio G85 প্রসেসর। আমরা অনেকেই হয়তো Media Tek এর প্রসেসরটির সাথে পরিচিত। আগে 15 বা 16 হাজার টাকার ফোনে আমরা এই প্রসেসরটি দেখতাম।
কিন্তু প্রসেসরের বাজারটি আসলে রিভলিউশনাইজড হওয়াতে এদের দাম অনেক বেড়ে যায়। যদিও রিভলিউশনটা হয়েছে খারাপের দিকে। VIVO এর অফিসিয়াল এই ফোনে, তাও আবার 21 হাজার টাকা বা 26 হাজার টাকার VIVO Y28 এ আমরা Media Tek Helio G99 প্রসেসরটি আশা করেছিলাম। এই প্রসেসরটি ব্যবহার করা হলে এর পারফরম্যান্স আপ টু দ্যা মার্ক হতো।
প্রসেসর এর জায়গায় VIVO Y28 বলতে গেলে কিছুটা হতাশ করেছে। তাই এর পারফরম্যান্স কিছুটা আন্ডার পারফর্মিং মনে হয়েছে।
তবে Day to day লাইফে আপনি 6GB বা 8GB ভ্যারিয়েন্টের যেকোন একটি নেন না কেন, কোন প্রবলেম হয়ত ফেস করবেন না। মোটামুটি মানের মাল্টিটাস্কিং করতে পারবেন, একদমই হেভি মাল্টি টাস্কিং করতে গেলে অবভিয়াসলি কিছুটা ল্যাগ করবে, তবে তেমন বেশি না। এই জায়গায় আপনি যদি আরো বেটার পারফরম্যান্স চান তাহলে এর 8GB ভ্যারিয়েন্টটা নিতে পারেন।
কিন্তু vivo এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই ফোনটির স্পেসিফিকেশনে দেখা যায় 25+ অ্যাপস আপনি একইসাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করাতে পারবেন। যদিও আমাদের পারফরম্যান্স টেস্টে তেমন দেখা যায় নি।
VIVO Y28 কি গেমিংয়ের জন্য অপটিমাইজড?
এক কথায়, গেমিংয়ের জন্য VIVO Y28 খুব একটা ভালো চয়েজ হবে না। PUBG এর মতো গেমগুলো লো সেটিংসে খেলতে গিয়েও মাঝেমধ্যে ল্যাগ দেখা গিয়েছে। তবে আপনি যদি বেসিক গেমিং করেন লাইক, ফ্রি ফায়ারের মতো গেম, তাহলে হয়তো খুব একটা প্রবলেম ফেস করবেন না।
তবে আরেকটু এডভান্স গেমিং করতে গেলেই আপনাকে প্রবলেম ফেস করতে হবে। তবে গেম খেলতে গিয়ে ওভারহিটিং লক্ষ করা যায় নি।শেষ কথা হলো, Day to day লাইফে নরমাল কাজকর্ম করার জন্য এই ফোনটা ঠিক আছে, তবে যদি গেমিংকে ফোকাস করে এটি কিনতে চান তাহলে কিছুটা হতাশ হতে হবে।
VIVO Y28 এর সফটওয়্যার সাইড
যদিও এটার সফটওয়্যার লেটেস্ট। আউট অফ দ্যা বক্স, Android 14 এটাকে রান করে। এটার UI নিয়েও কমপ্লেইন নেই। তাছাড়া সফটওয়্যার গুলো বেশ স্মুথলি রান করছিল।
VIVO Y28 এর ক্যামেরা
চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্যামেরা সেকশনে ফোনটি কেমন পারফর্ম করছে। পেছনে দুইটি ক্যামেরা আছে। একটি 50MP এর প্রাইমারি ক্যামেরা এবং একটা সেকেন্ডারি 2MP এর সেন্সর আছে। আর সামনের দিকে একটা 8MP এর সেলফি ক্যামেরা আছে।
পেছনের ক্যামেরা দিয়ে আমরা brought daylight এ যে ছবিগুলো তুলেছি সেগুলোতে মোটামুটি মানের ডিটেইল এবং শার্পনেস রিটেইন করা যাচ্ছিল। তবে ছবির কালারগুলো ঠিকঠাক আছে।
তবে হিউম্যান সাবজেক্টের ছবিগুলো একটু বেশি কন্ট্রাস্টিও মনে হচ্ছিল। Dynamic performance নরমাল ছবিতে ঠিক থাকলেও পোট্রেইট মুডে গিয়ে একদমই ওয়াশড আউট লাগে, বিশেষ করে পেছনে আকাশ থাকলে।
সাবজেক্ট সেপারেশন বা ডেপ্থ মেপিং আমার কাছে এভারেজ মনে হয়েছে। প্রাইসটা কনসিডার করলে এটাও আরেকটু ইম্প্রুভ করতে পারত VIVO।
লো লাইটেও খুব আহামরি মানের ছবি এটা দিতে পারে না। যদি মোটামুটি লাইট থাকে তাহলে চালিয়ে নেওয়ার মতো ছবি তুলতে পারবেন।
ফ্রন্ট ক্যামেরার কথাই যদি বলি এটাও পেছনের ক্যামেরার মতো খুব একটা ইম্প্রেসিভ না। কালারগুলো ওয়াশড আউট লাগে। পোট্রেইট মুডের ছবির বেলায় সাবজেক্ট সেপারেশনটা আরেকটু ইম্প্রুভ করা যেত।
VIVO Y28 এর ক্যামেরা পারফরম্যান্সের শেষকথা হলো, এটা একদমই ক্যামেরা সেন্ট্রিক ফোন না। প্রাইস বিবেচনায় এর পারফরম্যান্স এভারেজ।
ভিডিও কোয়ালিটি
এটা দিয়ে 1080P 30 fps এ ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন। কোন ধরনের স্ট্যাবিলাইজার নেই। 4K এর অপশন তো নেই, এমনকি 1080P 60 fps এর অপশনও নেই। সো এটা দিয়ে একদমই এভারেজ কোয়ালিটির ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন।
এবার VIVO Y28 এর এমন একটা ফিচার নিয়ে কথা বলব যেটা এক ঝটকায় আপনার আমার সবার মন ভালো করে দিবে। একই সাথে এটার কমতিগুলোকে মোটামুটি পুষিয়ে দিতে পারবে। ওকে, সেই আউটস্ট্যান্ডিং ফিচার হলো এটার ব্যাটারি বা ব্যাটারি ব্যাকআপ।
VIVO Y28 এর ব্যাটারি (The best) পারফরম্যান্স
ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে 6000mAh এর ব্যাটারি। এই প্রাইস রেঞ্জে খুব কম ফোনেই আমরা এত শক্তিশালী ব্যাটারি দেখতে পাই। একবার ফুল চার্জ করলে ইজিলি আপনাকে দুই দিন ব্যাকআপ দিবে যদি একটু মডারেট ইউজ করেন।
আর যদি একটু লো বা কম ইউজ করেন তাহলে দুই দিনের চাইতেও বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন।
সেই সাথে ফোনটার বক্সের ভিতর 44W এর একটা চার্জার পেয়ে যাবেন। যেটা দিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যেই ফোনটিকে চার্জ করে ফেলতে পারবেন।
VIVO ক্লেইম করছে এই ফোনটা 4 বছর পর্যন্ত নরমাল ব্যাটারি হ্যালথ বজায় রাখবে। অর্থাৎ চার বছর পর্যন্ত আপনি সমান ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। VIVO আরো ক্লেইম করছে 48 মাস পর্যন্ত এটা থেকে স্মুথ এক্সপেরিয়েন্স পাবেন।
সো এই অন্তত একটা ফিচারে কর্থাৎ চার্জিং এবং ব্যাটারি ব্যাকআপে VIVO Y28 কে ওভারকাম করার মতো খুব কম ফোনই আছে।
শেষকথা
VIVO Y28 আসলে যে প্রাইসে লঞ্চ হয়েছে তাতে বেশ কিছু জিনিস কমতি বলে মনে হচ্ছে। যেমন -
✓ ক্যামেরাটা আরেকটু বেটার পারফর্মিং হতে পারত।
✓ প্রসেসর হিসেবে Media Tek Helio G99 ব্যবহার করলে পারফরম্যান্স আরো ভালো হতো।
✓ ডিসপ্লে রেজুলেশন Full HD+ হওয়া দরকার ছিল।
এসব বিবেচনায় এর প্রাইসও আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। প্রাইসটাও আরেকটু কমানো যেত।
আরো দেখুন,
রিভিউ করেছেন: 'Sohag360'
All images taken from 'Sohag360'
0 Comments